চার মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না নওগাঁ সরকারি কলেজের বেসরকারি কর্মচারীরা। বকেয়া বেতন দাবিতে রোববার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন নওগাঁ সরকারি কলেজ বেসরকারি কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
এ কর্মসূচি থেকে বকেয়া বেতন না পাওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়।
আন্দোলনরত কর্মচারীরা জানান, নওগাঁ সরকারি কলেজে বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে (মাস্টার রোল) চাকরি পাওয়া কর্মচারীর সংখ্যা বর্তমানে ৮৬ জন। কোনো কোনো কর্মচারী ২০-২৫ বছর এভাবে কাজ করছেন। প্রয়োজনের তুলনায় কম হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন-ভাতা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু গত চার মাস ধরে কোনো বেতন-ভাতা দিচ্ছে না। এতে পরিবার নিয়ে কঠিন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। নিরুপায় হয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান তারা।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ সরকারি কলেজ বেসরকারি কর্মচারী ঐক্য পরিষদ সভাপতি ফজলুর রহমান। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন, কর্মচারী শিরিন আখতার, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আমানুজ্জামান শিউল, সহ-সভাপতি রিয়াজ খান ও ছাত্রলীগ নেতা বিশাল সরদার।
মানববন্ধনে বক্তব্য দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিরিন আখতার নামে এক কর্মচারী। তিনি বলেন, ‘গত ১৮ বছর ধরে এই কলেজে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছি। এত দিন কোনো সমস্যা হয়নি। আট বছর আগে স্বামী মারা গেলেও কলেজ থেকে যেটুকু বেতন পাইতাম তা দিয়ে সংসার কোনোরকমে চলে যেত।
‘কিন্তু গত চার মাস কলেজ থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাইনি। আমার স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে ও এক মেয়ে। চারজনের এই সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। চার মাস কলেজ থেকে বেতন-ভাতা না পেয়ে মানুষের কাছ থেকে ধার-দেনা করে সংসার চালাচ্ছি। অনেক সময় ছেলে-মেয়েদের মুখে খাবার দিতে পারি না। কলেজ থেকে নিয়মিত বেতন না পেলে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন বলেন, ‘চার মাস ধরে আমি কোনো বেতন পাচ্ছি না। এর মধ্যে একাধিকবার বেতন-ভাতার দাবিতে আমরা অধ্যক্ষের কাছে গিয়েছি। তিনি অনেক দিন ধরে বেতন দেব-দিচ্ছি বলে টালবাহানা করেছেন।
‘সর্বশেষ ঈদের আগে অধ্যক্ষের কাছে গিয়ে বকেয়া বেতন-ভাতা দেয়ার দাবি জানালে অধ্যক্ষ আমাদের জানিয়ে দেন, কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য কলেজে ফান্ড নেই। তাই কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো প্রকার বেতন-ভাতা দিতে পারছে না।’
বিষয়টি মানবিকভাবে নিয়ে অন্যান্য ফান্ড থেকে বেতন-ভাতা দেয়ার দাবি জানিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন।
তিনি বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় কলেজের অন্যান্য ফান্ড থেকে সমন্বয় করে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়ার দাবি জানালে অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘এভাবে বেতন-ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। তোমরা প্রয়োজনে রিকশা চালিয়ে জীবন নির্বাহ কর কিংবা না পোষালে চাকরি ছেড়ে দাও।’’
এ অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ মানিক কুমার সাহা বলেন, ‘মাস্টার রোলে কর্মরত কর্মচারীদের কলেজ ফান্ড থেকে বেতন-ভাতা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু গত চার মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা দেয়া দেয়া সম্ভব হয়নি। এটা খুবই পরিতাপের বিষয়।’
এই মুহূর্তে দুঃখ প্রকাশ ছাড়া কিছুই করার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে গত দেড় বছর ধরে প্রায় সব ধরনের ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ। ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া চালু থাকলে বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ছাত্রদের কাছ থেকে সরকার অনুমোদিত একটি নির্দিষ্ট ফি আদায় করা হতো।
‘ছাত্র ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায়, সব ধরনের ফি আদায় প্রক্রিয়া চলমান না থাকায় বেসরকারি এসব কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেয়ার যে ফান্ড রয়েছে সেটি শূন্য হয়ে গেছে। এ কারনে গত চার মাস ধরে তাদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। এখন ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।’