ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতায় হেফাজতে ইসলামের জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জমা দেয়া অভিযোগ আগামী ২৪ মে এর মধ্যে নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন বাদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
নিজের ফেসবুক আইডি থেকে শনিবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দিয়েছেন তিনি। মেকাতাদির চৌধুরী বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
ফেসবুক পোস্টের ব্যাপারে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি পোস্ট দিয়েছি। আগামী ২৪ মে’র মধ্যে এজাহারটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা না হলে আদালতে মামলা করব।’
গত ১ মে হেফাজতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা সাজিদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মুফতি মুবারকসহ ১৪ জনের নামে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দেড়শ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নেয়ার জন্য সদর মডেল থানায় অভিযোগ করেন সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী। তার পক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল জব্বার মামুন এজাহারটি জমা দেন।
এজাহারে উল্লিখিত ফেসবুকের লিংকগুলো থেকে রাষ্ট্রবিরোধী ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরির পোস্ট দেয়া হয়েছিল কিনা- সেটি পরীক্ষা করে মতামত দেয়ার জন্য ২ মে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কাছে চিঠি দেয় সদর মডেল থানা পুলিশ। কিন্তু তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভক্ত করা হয়নি।
এজাহারে বলা হয়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। তারা সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগ্নেয়াস্ত্র ও গান পাউডারসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে।
মাওলানা সাজিদুর রহমান ও মুফতি মুবারক উল্লাহসহ অন্য আসামিদের নির্দেশে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, আইডি ও নিউজ পোর্টালে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক বিদ্বেষ ও ঘৃণামূলক স্ট্যাটাস দিয়ে জনসাধারণের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। এর মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
সাংসদ মোকতাদির চৌধুরী বলেন, ‘আগামী ২৪ মের মধ্যে যদি আমার এজাহার নিয়মিত মামলা হিসেবে না নেয়, তাহলে আমি আদালতে যাব।’
সাংসদের এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে বিলম্ব হওয়ার কারণ সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি মতামতের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। সিআইডির মতামত এখনও পাওয়া যায়নি। অন্য মামলার ক্ষেত্রে মতামত আসতে দুই-তিন সপ্তাহ বা কম-বেশি সময় লাগে বলে জানান তিনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি আমরা সিআইডিতে পাঠিয়েছি মতামতের জন্য। উনি (বাদী) যে তারিখে দিয়েছেন, তার পরের দিনই আমরা পাঠিয়েছি। একটি মতামত এসেছে। আবার কয়েকটি কোয়েরি দিয়ে পাঠিয়েছে। সেগুলোও আমরা পাঠিয়েছি। এগুলো দেখে আবার মতামত দিবে। আমার মনে হয় শিগগিরই মতামত দিয়ে দেবে।’
গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা, জেলা পরিষদ কার্যালয়, জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পৌরসভা কার্যালয়, পৌরমিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস ও আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনসহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা অগ্নিসংযোগ করে। এ সব ঘটনায় ৫৬টি মামলা হয়েছে।