স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও সেটি উপেক্ষিত হচ্ছে বরিশালে। যাত্রী বোঝাই করে বাস চলাচল করলেও ভাড়া রাখা হচ্ছে কয়েক গুণ। আন্তজেলা রুটে বাস চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও চলছে দূর পাল্লার রুটে।
শনিবার বিকেলে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদে গিয়ে দেখা যায়, আন্তজেলা রুটের বাসগুলোই যাত্রী পরিবহন করছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাট পর্যন্ত। কোনো বাসে ৬০০ টাকা আবার কোনো বাসে যাত্রীপ্রতি ৮০০ টাকা ভাড়া রাখা হচ্ছে।নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন শ্রমিক জানান, বরিশাল থেকে পাঁচ দিন ধরে মাওয়া রুটে যাতায়াত শুরু করেছে আন্তজেলা রুটের বাসগুলো।
পারিবারিক কাজে ঢাকা যাচ্ছিলেন বরিশালের কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা সাইফুল নহর পলাশ। টার্মিনালে এসে প্রথমে থ্রি হুইলার পেলেও পরে দেখেন সব বাসই চলাচল করছে।
তিনি বলেন, ‘মাওয়া যাওয়ার জন্য লোকাল বাসে ৬০০ টাকা ভাড়া চুক্তিতে উঠি। ঠেলে বাসের ভেতরে ঢোকানো হলে দেখি আরেক কাণ্ড। যেখানে প্রতি দুই সিটে একজন বসার কথা, সেখানে বসছে দুজন করে। এ ছাড়া অনেকে দাঁড়িয়েও ছিলেন।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, দূরপাল্লার রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকার কথা। অথচ নথুল্লাবাদ স্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ছে স্বাভাবিকভাবেই।বরিশাল থেকে মাওয়া রুটের বিএমএফ পরিবহন কাউন্টারের সামনে গিয়ে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেল। প্রতি টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়।
যাত্রী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘এমনে ভাড়া ২২০ টাকা। এখন ভাড়া দেয়া লাগতেছে ৫০০ টাকা। ভাড়া ডাবল দিছি, তবে সিট তো পুরো একা পাই নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার পাশে আরও একজন আছে। এমন দুর্ভোগ তো হওয়ার কথা না। বাসশ্রমিকদের খামখেয়ালিতে এমনটা হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসমালিক বলেন, ‘টানা লকডাউন থাকায় পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের লোকাল বাসগুলো ঈদের আগে-পরে মাদারীপুর বাস মালিক সমিতির সঙ্গে কন্ট্যাক্ট করে বরিশাল টু মাওয়া রুটে যাত্রী পরিবহন করছে।’
সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে যাত্রী বসানো হয়েছে প্রতি সিটে। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদেরও তো বাঁচতে হবে। আমাদের বাসমালিকদের অবস্থাও খুব খারাপ। আয়-ইনকাম না থাকায় মাওয়া রুটে বাস চলাচল করাতে হচ্ছে। স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’
বরিশাল আন্তজেলা রুটের একটি বাসের চালক আলিম তালুকদার বলেন, ‘আমরা তো অনেক দিন বাস চালাইন্না বন্ধ রাখছি। মোগো ১৪ রুটে গাড়ি চালাইতাম। তয় মোগো সামনে দিয়া সিএনজি, মাহিন্দ্রা, অ্যাম্বুলেন্স আর মাইক্রোবাসে কইরা যাত্রী মাওয়া নেতে আছে।’
তিনি বলেন, ‘হেরা জনপ্রতি ২২০ থেকে ২৫০ টাকার ভাড়া রাখতে আছে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। আমরা কী শুধু দেখমু আর না খাইয়া থাকমু?’
আলিম তালুকদার আরও বলেন, ‘লোকাল রুটে এহন যাত্রী নাই। তাই মালিকগো লগে কথা কইয়া বাস মাওয়ায় চালাইতে আছি। ভাড়া বেশি নেই না, মানে দু-এক শ টাকা বেশি নিই। আমাগোও তো পোষান লাগবে।’
আরেকটি বাসে চালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘গাদাগাদি কইরা কাউরেই বওয়ান হয় না। হেরা হেগো মতো বয়। মোরা বাস চালাইলেই সমস্যা খালি, হেয়া ছাড়া তো সমস্যা নাই।’
বাস চলাচলের বিষয়ে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাসরেক বাবলু বলেন, ‘আন্তরুটের বাস লং রুটে চলাচল করে না। এ রকম কিছু ঘটলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জাকির আলম মজুমদার বলেন, ‘পুলিশের তদারকি রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’