খুলনা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। আগামী সোমবারে আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকা এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে খুলনার কয়রা উপজেলা। জোয়ারের পানি বাড়লে ভেঙে যেতে পারে চারটি পয়েন্টের বাঁধ।
এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ বেশ কিছু বাঁধ মেরামত হলেও ঝুঁকি কমেনি। উপজেলা প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বাঁধগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়রা ইউনিয়নের কাঠমারচর, হাজৎখালি, গাজিপাড়া এলাকায় বাঁধের বেশ কয়েকটি জায়গা এখনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদি জোয়ারের পানির তীব্রতা বাড়ে তাহলে যে কোনো মুহূর্তে পুরো এলাকা নোনা পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।
তারা অভিযোগ করেন, এখনও বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ফুটো করে পাইপ দিয়ে ঘেরে লবণ পানি ওঠানোয় বাঁধগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।
খুলনার জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, ‘উত্তর আন্দামান সাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় বর্তমানে লঘুচাপ পরিস্থিতিতে রয়েছে। এটি ঝূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। পরে এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছতে পারে।’
খুলনা জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে কয়রা উপজেলা।
কয়রার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় শুক্রবার উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০ জন কর্মীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা উপজেলার ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে মানুষ থাকার উপযোগি করছে।
উপজেলার চারটি বাঁধ ঝুকিপূর্ণ হিসাবে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ইউএনও বলেন, ‘শনিবার আমরা এগুলো পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধে মাটি ও জিও ব্যাগ দিয়ে সংরক্ষণ করছেন। এর মধ্যে উত্তর বেদকাশী ও দশালিয়ার বাঁধ দুটি বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।’
কয়রা উপজেলা চেয়াম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে যদি জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যায়, বাঁধ টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু এলাকায় বাঁধের উচ্চতা কম রয়েছে। জোয়ারের পানির উচ্চতা বাড়লে বাঁধ উপচে পানি ঢুকে পড়ে এবং বাঁধ ভেঙে যায়। বর্তমানে উপজেলার চারটি পয়েন্টে বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’
ইতোমধ্যে এগুলো সংরক্ষণে পাউবো কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘উপজেলার সাত ইউনিয়নে প্রায় চার লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ঝুঁকিতে রয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। কিন্তু ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা ৫০ হাজারেরও কম।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ারদার বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলার ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। খাদ্যসামগ্রীও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাইকিং করে সতর্ক করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঝড়ের সংকেত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।’