‘বাড়িত ধান শুকির জাগা নাই, এই জন (জন্যে) রাস্তাত শুকাইছি। এইঠে তাড়াতাড়ি শুকায়’- কথাগুলো বলছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বগুলাগাড়ি গ্রামের রাহেনা বেগম।
একই এলাকার জহুরুল আলম বলেন, ‘হামরা যায় যায় ধান আবাদ করছি, এই সড়কেই হামার ভরসা। সড়কে রোদ ভালো থাকে তিন-চার ঘণ্টায় ধান শুকে টনটনা। বাড়িত আঙ্গিনা নাই, চাতাল নাই, কোঠে যাই।’
নীলফামারীর বিভিন্ন সড়কে চলাচল করলেই এখন চোখে পড়বে ধান, খড় কিংবা ভুট্টা শুকানোর চিত্র। সড়কগুলো কৃষকরা ব্যবহার করছেন চাতাল হিসেবে।
কিছু কিছু স্থানে খড় বা ধান যেভাবে জমাট করে রাখা হয়েছে, তাতে সাইকেল নিয়ে যেতেই হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে।
সড়কে ধান, খড় শুকানোর ফলে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে আইনের ব্যবহার করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সড়ক দুর্ঘটনা রোধ নিয়ে কাজ করা সংগঠনের কর্মীরা।
জেলা শহর থেকে জলঢাকা উপজেলা শহরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এই সড়কের প্রায় অধিকাংশ স্থানে শুকানো হচ্ছে খড়, ধান কিংবা ভুট্টা।
অটোরিকশার চালক মজিদুল ইসলাম জানান, সড়কগুলোতে খুব সতর্ক হয়ে চলতে হয়। একটু অমনোযোগী হলেই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
জলঢাকা উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম জানান, সড়কে যেভাবে ধান আর খড় শুকানো হচ্ছে তাতে স্বাভাবিক গতিতে মোটরসাইকেল চালানো যায় না। অনেক স্থানে মোটা করে খড় দেয়ার কারণে আটকে যায় গাড়ি। অনেক সময় রাস্তার দুইদিকে গাড়ির জট লেগে যায়।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নীলফামারী জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাসেল আমিন বলেন, ‘মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এ সময় চলাচল করতে হচ্ছে পথচারীদের। কারণ, বোরো ধান উঠে গেছে। অধিকাংশ সড়কে এই ধান শুকানো হচ্ছে। আমি মনে করি, আইনের ব্যবহারের পাশাপাশি সচেতনতাও প্রয়োজন।
‘প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। গত একমাসে ১০টি দুর্ঘটনায় দুইজন প্রাণ হারিয়েছে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এলিনা আকতার বলেন, ‘সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা অপরাধ। এরপরও শোনে না মানুষ। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, উঠোন বৈঠকে মানুষকে সচেতন করা হয়।
‘সড়কে যেন ধান, খড়, ভুট্টা শুকানো না হয় এ জন্য সড়ক বিভাগের সাথে সমন্বয় করে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। না হলে আইন প্রয়োগের বিষয়টি আসবে।’
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল করিম বলেন, ‘সড়কের ওপর কোনো বস্তু রাখারও নিয়ম নেই। বিশেষ করে ধান-খড় তো শুকানোরই কথা নয়। তারপরও আমরা যখন যাই কৃষকদের নিরুৎসাহিত করি।
‘আমাদের সব কর্মীকে নির্দেশনাও দেয়া রয়েছে, যাতে মানুষ সড়কে এটি করতে না পারে, সে জন্য উদ্বুদ্ধ করতে।’