গোবিন্দভোগের পর এবার বিদেশে যাচ্ছে সাতক্ষীরার হিমসাগর আম। সাতক্ষীরার ছয়ঘরিয়া গ্রাম থেকে চার মেট্রিক টন আম আজ ব্রিটেন ও ফ্রান্সে রপ্তানি করা হয়েছে। ধীরে ধীরে আরও আম বিদেশের বাজারে রপ্তানি হবে। তবে আমের দাম নিয়ে বরাবরের মতো হতাশ চাষিরা।
সাতক্ষীরার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার পাঁচ হাজারের বেশি বাগানে আম চাষ হয়েছে। ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। আর ৫০০ হেক্টর জমিতে গোপালভোগ ও গোবিন্দভোগ আম চাষ করা হয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে শুরু হয় সাতক্ষীরার আমের বিদেশযাত্রা। করোনার কারণে গত বছর বন্ধ থাকার পর এবার আম ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিদেশের বাজারে যাচ্ছে। বিদেশে আম রপ্তানির টার্গেট রয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন।
মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় অন্যান্য স্থানের তুলনায় সাতক্ষীরায় আম আগেই ফলে। তাই আগেই বাজারজাত করা যায় সাতক্ষীরার আম। মাটির গুণে আমের স্বাদও ভালো। এসব কারণে দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সাতক্ষীরার আমের।
ইউরোপের ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালি, পর্তুগাল ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সাধারণত সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হয়। গত বছর করোনার কারণে বিদেশে আম যায়নি।
এক বছর বন্ধ থাকার পরে এ বছর সাতক্ষীরার আম বিদেশে যাচ্ছে। গত ৮ মে ৫০০ কেজি গোবিন্দভোগ আম পরীক্ষামূলকভাবে জার্মানিতে রপ্তানি হয়। শুক্রবার থেকে লন্ডন ও ফ্রান্সে হিমসাগর আম পাঠানো শুরু হয়েছে। চার মেট্রিক টন আম সাতক্ষীরা থেকে যাচ্ছে। মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্সসহ চারটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা থেকে আম কিনছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও এফএও যৌথ কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে সাতক্ষীরার বিশুদ্ধ আম উৎপাদনে। ৫০০ আমচাষিকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের ‘সফল প্রকল্প’। তবে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে আম বিক্রিতে খুশি নন চাষিরা। তারা বলছেন, রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করতে গেলে তাদের প্রচুর খরচ হয়।
এ প্রসঙ্গে ছয়ঘরিয়া গ্রামের আমচাষি হাফিজুর রহমান বলেন, 'সংস্থাগুলো প্রশিক্ষণ আমাদের দিয়েছে, এটা সত্য। তবে পরিচর্যা করতে যে খরচ, তাতে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করলে আমার লাভ থাকবে না।'
তিনি আরও বলেন, পরিচর্যাকৃত আম প্রচুর পরিমাণে বাদ দেয় ক্রেতারা। ২০ মণ আমে কমপক্ষে ৭ মণ বাদ দেয়া হয়। বাদ দেয়া আমগুলো অনেক কম দামে বেচতে হয়। তিনি হিমসাগরের দাম মণপ্রতি ৩ হাজার টাকা দেয়ার দাবি জানান।
তবে দামের বিষয়ে উত্তরণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইকবাল হোসেন জানান, বাইরে আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়। আর বিদেশে রপ্তানিযোগ্য আমের চাষিরা দাম পাচ্ছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা। এ জন্য চাষিরা এই দাম পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নন বলে দাবি করেন ইকবাল হোসেন।
সলিডারেড নেটওয়ার্কিং এশিয়ার প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'আমরা ৫০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কীভাবে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন করা যায়, প্রশিক্ষণটা মূলত সেখানে। আজকে ছয়ঘরিয়ার হাফিজুর রহমানের বাগান থেকে আম পাঠানো হচ্ছে। ক্রেতা হলো তাসফিক ইন্টারন্যাশনাল ও এনএসবি করপোরেশন। তারা ইতালি ও লন্ডনে আমগুলো পাঠাচ্ছে।'
মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, শুধু ইউরোপের দেশগুলোই নয়, ইয়েমেন, বাহরাইন ও মালয়েশিয়াতেও সাতক্ষীরার আম যাবে। ২৭ মে থেকে ল্যাংড়া ও ৪ জুনের পর থেকে আম্রপালি আমও বিদেশে যাবে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাষিদের উত্তম কৃষিচর্চায় প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। কীভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে, তার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। আহরণের আগে এক মাসের মধ্যে কীটনাশক প্রয়োগ করা যাবে না। বিষয়টিতে আমরা খুবই নজর রাখি। এ ছাড়া আম পাড়ার পরে কোনো রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করা যাবে না। সাতক্ষীরার আমে যাতে বদনাম না হয়, সে জন্য জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ একযোগে কাজ করছে।’