শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে পৌর মেয়রের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ ৩১ জনকে।
মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ বাদশার বাবা আব্দুল মতিন বৃহস্পতিবার রাতে এই মামলা করেছেন বলে জানান নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশির আহমেদ বাদল।
সাব্বির জেলা ছাত্রলীগের উপমানব সম্পদ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। পৌর মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিকের উপস্থিতিতে তাকে মারধর করার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ মে দুপুরে। ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সিড়ি দিয়ে নামছিলেন মেয়র আবু বক্কর। সিড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির। সিড়ি থেকে নেমে যাওয়ার সময় আবু বক্করকে সালাম দেন সাব্বির। এর পরপরই আবু বকরের সঙ্গে থাকা লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়ে এলোপাতারি মারতে থাকে। পরে মেয়র এসে তার সমর্থকদের সেখান থেকে নিয়ে যান।
সাব্বিরের বাবা আব্দুল মতিন বলেন, ‘মেয়র আবু বক্কর তার কর্মীদের নিয়ে দোতলা থেকে নিচে নামার সময় আমার ছেলে সাব্বির মেয়রকে দেখেই সালাম দেন। সালামের জবাব না দিয়ে মেয়র তাকে ধমক দিয়ে বলেছেন- “এই বেয়াদব তুই এহেনে কি করস রে”। এটা বলে উনি যাওয়ার পরই তার (মেয়রের) অনুসারীরা তাকে (সাব্বিরকে) মারধর করেছেন।
‘পরে নালিতাবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান লেবু সাব (উপজেলা চেয়ারম্যান) আমার ছেলেকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী হাসপাতালে পাঠানোর পর আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে ডাক্তাররা ময়মনসিংহে আমার ছেলেকে রেফার্ড করছেন। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িতদের বিচার চাই।’
এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানানো হয়েছে ফেসবুকে। শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শোয়েব আহমেদ শাকিল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একজন মেয়রের সামনে একজন ছাত্রলীগ কর্মী ও জেলা ছাত্রলীগের একজন পোস্টেড নেতাকে মারধরের ঘটনা লজ্জাজনক। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, মেয়রের সঙ্গে থাকা ছেলেগুলোই সাব্বিরের ওপর হামলা করেছে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের অনুরোধ, দ্রুত এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী পৌরসভার মেয়র আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমি বা আমার কোনো কর্মী-সমর্থক জড়িত না। স্থানীয়ভাবে রাজনীতিতে আমাকে হেয় করার জন্যই এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যারা এই কাজে জড়িত আমি নিজেও তাদের বিচার চাই।’
ভিডিও ফুটেজে তার উপস্থিতি এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে মারধর করতে দেখা গেছে জানানো হলেও মেয়র বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এদিকে, এই ঘটনার পর নিজ কার্যালয়ের নিরাপত্তা চেয়ে বাড়তি পুলিশ মোতায়েনের জন্য নালিতাবাড়ী থানা পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ঘটনাটি উপজেলা পরিষদ চত্বরে ঘটেছে, তাই দপ্তরের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশির আহমেদ বাদল বলেন, কী কারণে সাব্বিরকে মারধর করা হয়েছে তা বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে এই হামলা চালানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।