বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১৪ বছর পর ফিরলেন রুবেল, জেল খেটেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা

  •    
  • ২১ মে, ২০২১ ০১:৪৯

বীর মুক্তিযোদ্ধা জুলহাস উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মতো আরও পাঁচজনরে ধরছে। তারাও দুই থ্যাইকা চার মাস জেল খাটছে। এরপর আদালত থেকে জামিনে বের হইছি আমরা। পরে তো মামলাই শেষ হইল। আজ শুনলাম রুবেল গ্রামে ফিরে আসছে । পরে গ্রামবাসী ও আমরা তারে থানায় নিয়ে হাজির হইছি।’

নিখোঁজ হওয়ার ১৪ বছর চার মাস পর নিজ এলাকায় ফিরেছেন মোহাম্মদ রুবেল নামের এক যুবক। এদিকে তাকে অপহরণের অভিযোগে তার মায়ের করা মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ছয়জন, যে মামলার আসামি ১৯ জন।

রুবেলের বাসা নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায়। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে কুড়েরপাড় এলাকায় ফিরে আসেন রুবেল। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে থানায় হাজির করা হয়।

২০০৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে ৭ বছর বয়সী রুবেলকে অপহরণের অভিযোগে তার মা রাহিমা বেগম মামলা করেন।

মামলায় বলা হয়, ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি বিকেল ৩টার দিকে রাহিমা বেগমের দুই ছেলে হাবিবুর রহমান ও মো. রুবেল বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। সেদিন তাদের মা রাহিমা তার বোনের বাড়ি বেড়াতে যান। সেই সুযোগে এলাকার মো. কালাই ও নুরুল ইসলাম বাড়িতে এসে তাদের ঘুম থেকে ওঠায়। তারা হাবিবুর ও রুবেলকে বলে- তোমাদের জমি থেকে মাটি কাটব, তোমার মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে। কত নৌকা মাটি হয়েছে তার হিসাব রাখবে তোমরা। তোমাদের কাছে টাকা দেয়া হবে। এ কথা বিশ্বাস করে রুবেল তাদের সঙ্গে চলে যায়। পরে সে ফিরে না আসায় বড় ছেলে হাবিবুর জমির কাছে তাকে খুঁজতে যায়। সেখানে সে রুবেল এবং কালাই ও নুরুল কাউকে পায়নি। পরদিন রাহিমা বাড়িতে ফিরে আসলে তাকে ঘটনা জানায় হাবিবুর। পরে তারা খোঁজাখুঁজি করে রুবেলকে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ আদালতে অপহরণ মামলা করেন রাহিমা বেগম। আসামি করা হয় ১৯ জনকে। তাদের মধ্যে দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন- নুরুল ইসলাম ও জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ। অন্যরা হলেন- কালাই চান, মনা, আমান, মুসলিম, মানিক, আজিজ, জিন্নাত আলী, সিরি মিয়া, ছালা উদ্দিন, শহর আলী, বাদশা মিয়া, সিরাজুল হক, শুক্কুর মেম্বার ও ইয়ানুছ, আউয়াল, রাজু ও হোসেন মিস্ত্রি।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন উপপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান। তিনি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৩০ জুলাই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে বাদী আদালতে পুলিশের তদন্তে নারাজি দেন। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি। সিআইডিও কয়েক মাস তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় আদালতে। তবে বাদী রাহিমা তাতেও নারাজি দেন। পরে দায়িত্ব পায় র‍্যাব। বাহিনীটি মামলার ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয়। অন্য আসামিরা ছিলেন পলাতক।

পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, র‍্যাবও তদন্ত শেষ করতে না পারায় পরবর্তীতে তদন্তের দায়িত্ব পায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। নারায়ণগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের উপপরির্দশক আসাদুজ্জামান ফরাজী তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই দিন মামলাটি নিষ্পত্তি করে আদালত।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার ১৪ বছর পর বৃহস্পতিবার বিকেলে কুড়েরপাড় গ্রামে হাজির হন ২২ বছর বয়সী রুবেল। তাকে দেখতে ভিড় জমায় আশপাশের মানুষ। খবর পেয়ে ছুটে যান মামলার সেই আসামিরাও। পরে রাত ১০টার দিকে তাকে সদর মডেল থানায় নেয়া হয়।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করা বীর মুক্তিযোদ্ধা জুলহাস উদ্দিন আহম্মেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রুবেল নামের এই যুবককে আমি কখনো দেখি নাই। তারে আজ প্রথম দেখলাম। কিন্তু তারে অপহরণের অভিযোগে আমারে গ্রেপ্তার করছে। পরে কারাগারে আড়াই মাস ছিলাম।

‘আমার মতো আরও পাঁচজনরে ধরছে। তারাও দুই থ্যাইকা চার মাস জেল খাটছে। এরপর আদালত থেকে জামিনে বের হইছি আমরা। পরে তো মামলাই শেষ হইল। আজ শুনলাম রুবেল গ্রামে ফিরে আসছে। পরে গ্রামবাসী ও আমরা তারে থানায় নিয়ে হাজির হইছি।’

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলার পর থানা থ্যাইকা আমাগো ধরার চেষ্টা করছে। পরে তারা দেখে ঘটনা মিথ্যা। র‍্যাব মামলার তদন্ত পাওয়ার পর আজিজ মাদবর, মনা, সিরি মাদবর, রাজু, জুলহাস উদ্দিনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের ১০ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নিয়েছে র‍্যাব। আমি সাড়ে চার বছর পালায় ছিলাম বান্দরবান।

‘মামলা শেষ হওয়ার পর ফিরে আসছি। আজ ওই ছেলে গ্রামে ফিরে আসছে। আমাগো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। বিনা কারণে জেল খাটতে হইছে। আমরা এর বিচার চাই।’

ফিরে আসা মো. রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছোটবেলায় মায় দুইটা গরু পালতে দিত। ঘরে গিয়া দেখতাম খাওন নাই। মায় মারত। তার অত্যাচারে ঘর থেইকা বাইর হইয়া গেছিলাম। তখন আমার বয়স আছিল সাত বছর।

‘এত বছর ঢাকায় আছিলাম। ঢাকার মগবাজার, হাতিরঝিলে। ওইখানে রঙের কাজ করতাম। ফাস্টফুডের দোকানে ও ইস্টার্ন প্লাজায় কাজ করছি। পরে সেখানেই একটা মেয়েরে বিয়া করছি।’

তিনি বলেন, ‘গত বছর আমাগো এক আত্মীয়র সাথে দেখা হইছে। তার মাধ্যমে মার সাথে কথা হয়। মারে কইলাম বাড়ি আসি? তখন মায় কইলো- বাড়িতে আসলে গ্রামের মানুষ তরে মাইরা ফেলবো। আমি তাগো নামে মামলা করছি। তাই ভয়ে আসি নাই।

‘আজ কাউরে কিছু না কইয়া গ্রামে আসছি। কিন্তু গ্রামের মানুষ আমারে চিনতে পারছে। তারা আমারে দেখার পর তাকায় ছিল। মার সাথেও দেখা হইছে। পরে সেখান থ্যাইকা আমারে থানায় নিয়ে আসছে গ্রামের মানুষ।’

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান বলেন, ‘১৪ বছর পর ফিরে আসা যুবক রুবেলকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর