বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জয় বাংলা পল্লী’তে উঠতে অনীহা ভূমিহীনদের

  •    
  • ২০ মে, ২০২১ ২৩:০২

পুরনো ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়ি, ইউএনওর নির্দেশে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে তোলা হয়েছে বালু।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য দিনাজপুর জেলায় নির্মাণ করা হয়েছে চার সহস্রাধিক বাড়ি। কিন্তু বাড়িগুলো নির্মাণের পর থেকেই নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি ফুলবাড়ীতে হালকা বাতাসে কয়েকটি বাড়ির ছাদ উড়ে যায়। রড ব্যবহার না করায় ভেঙে গেছে পিলার। রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ সংযোগও এখন পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

ফলে যে সব ভূমিহীন পরিবার বাড়িগুলোতে উঠেছেন তারা থাকতে চাইছেন না। আর যারা এখনও বাড়িতে ওঠেননি তাদের মধ্যে ওঠার বিষয়ে অনীহা তৈরি হয়েছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চার হাজার ৭৬৪টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়।

দিনাজপুর জেলায় প্রথম ধাপে নির্মিত বাড়িগুলোর নাম দেয়া হয় ‘জয় বাংলা পল্লী’। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর উপজেলায় ২৮০টি, বিরলে ৫৫৬টি, বোচাগঞ্জে ৪৩০টি, কাহারোলে ১৩৯, বীরগঞ্জে ৩৫০টি, খানসামায় ৪১০টি, চিরিরবন্দরে ২১৫টি, পার্বতীপুরে ২৬২টি, ফুলবাড়ীতে ৭৬৯টি, নবাবগঞ্জে ২২৬টি, বিরামপুরে ৪১৫টি, হাকিমপুরে ১৪৫টি ও ঘোড়াঘাটে ৫৬৭টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

ব্যবহার করা হয়েছে পুরোন ইট। ছবি: নিউজবাংলা

বাড়ির বর্গায় শিশু, কড়াইসহ বিভিন্ন ভালো মানের গাছের কাঠ ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ বাড়ি নির্মাণে ইউক্যালিপটাস কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে হস্তান্তরের আগেই বাড়ির বর্গার কাঠ ফেটে গেছে।

সোমবার গভীর রাতে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুরে জয়বাংলা পল্লীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে নবনির্মিত ছয়টি ঘরের টিনের চালা উড়ে যায়। এই উপজেলার ওপর দিয়ে সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে বৃষ্টির সঙ্গে হালকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এই ঝড়োবাতাসে ওই এলাকার আশেপাশের কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও নবনির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ছয়টি ঘরের বারান্দাসহ ঘরের ছাউনির টিন ও বর্গা উড়ে যায়। ভেঙে যায় ঘরের বারান্দার পিলার। বসবাসের শুরুতেই ঘর ভেঙে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সেখানে বসবাসকারীরা।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, গত সোমবার রাতে ফুলবাড়ীর ওপর দিয়ে যে বাতাস বয়ে গেছে, সেটির গতি ছিল ঘন্টায় ৩১ কিলোমিটার। যা খুবই সামান্য। এটিকে ঝড়ো হাওয়াও বলা যাবে না।

ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া বিউটি বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মোক সরকার ঘর দিলো কিন্তু এটা কেংকা ঘর? এনা বাতাসোত মোর ঘরের চালা উঁড়ি গিয়া পুকুরোত পড়ল। ছোলপোল নিয়া আল্লাহকে ডাকছিনু। আল্লাহ রহম কর, প্রাণে বাঁচি গেলে মুই আর ওই ঘরোত থাকিম না। মোর ছোলপোলকে রক্ষা কর। মুই মনোত নিসো, মাঠোত থাকিম তাও এঙ্কা ঘরোত যাম না আর। মুই মোর ছোলপোলকে হারাতে চাও না। এগলা মানসোক মারার জন্য করসে।’

হালকা বাতাসেই উড়ে যায় ঘরের চাল। ছবি: নিউজবাংলা

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে উপহার পাওয়া ঘরগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলো সরকারি খরচেই মেরামত করে দেয়া হয়েছে। যারা ঘরগুলো পেয়েছে তারা ঘরগুলোতে উঠছে না। আমরা যে ছোট ছোট তালা লাগিয়ে দিয়েছি তা তারা খুলে দরজা জানালা খুলে রাখে। একারণে ঝড়ের সময় ঘরে বাতাস ঢুকে চালাসহ উড়ে গেছে। আমরা সেগুলো মেরামত করে দিয়েছি।’

গত বছর শুরু হওয়া এই উপজেলার ২নং ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের সরদডাঙ্গার গ্রামে ১০০টি বাড়ির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজ শুরুর পর থেকে এই জায়গায় বাড়ি নির্মাণের নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাড়িগুলোর মধ্যে বহু বাড়ির ভিতসহ ওয়ালের গাঁথুনিতে ব্যবহার করা হয় পুরাতন ইট। এ ছাড়া বাড়ির বিভিন্ন ঢালাইকাজে ব্যবহার করা হয় পুরাতন ইটের খোয়া।

বাড়ির নির্মাণে দামি সিমেন্ট বাদ দিয়ে নিম্নমানের সিমেন্টের ব্যবহার হয়। এ ছাড়া নিয়ম রয়েছে বাড়িগুলো ভিত হিসেবে ১০ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দিতে হবে- কিন্তু সদরডাঙ্গায় বেশির ভাগ বাড়ি ভিত ছাড়াই নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া বারান্দায় ১০ ইঞ্চি গাথুনির নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ বাড়িতে ৫ ইঞ্চি গাঁথুনি দেয়া হয়। একইভাবে উপজেলার অন্যান্য জায়গায় বাড়ি নির্মাণে নানান অনিয়ম পাওয়া গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, সদরডাঙ্গায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভুমি) জাবের মো. সোয়াইবের নির্দেশে পাশ্ববর্তী পুনর্ভবা নদীতে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসানো হয়। আর এই ড্রেজার দিয়ে উত্তোলিত বালু পাইপযোগে ব্যক্তিগত কৃষকদের জমির ওপর দিয়ে যায় প্রকল্পের স্থানে। কিন্তু নিয়ম রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যবহৃত বালু যেকোনো ঘাট থেকে আনতে হবে। কিন্তু এই প্রকল্পে তা করা হয়নি।

আব্দুর রাজ্জাককে ফোন করা হলে এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

বিরল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) জাবের মো. সোয়াইব নিউজবাংলাকে বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের বিল কমিটির মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি কোনো ঘাট ছাড়া অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকি নিউজবাংলাকে জানান, এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোনো অনিয়মের অভিযোগ আসেনি। যদি অভিযোগ আসে তা হলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া ফুলবাড়ীতে টিনের চালা উড়ে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর