বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় বুধবার মধ্যরাত থেকে ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য অধিদপ্তর। দেশের মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে প্রতিবছর এই সময়ে সাগরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সব প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধি ও ইলিশ বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক মো. আনিচুর রহমান বলেন, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হবে। সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন মৌসুম চিহ্নিত হওয়ায় প্রতিবছর এ সময়টায় ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জন সাগরগামী জেলে রয়েছে। তারমধ্যে ভোলায় সবচেয়ে বেশি ৬৩ হাজার ৯৫৪ জন, বরগুনায় ২৭ হাজার ২৭৭ জন, ঝালকাঠী ৪০ জন, পটুয়াখালী ৪৭ হাজার ৮৫৮ জন, পিরোজপুর ৫ হাজার ৩৯৩ জন এবং বরিশাল জেলায় ১৮২১ জন জেলে রয়েছেন।
তাদের আগামী ৬৫ দিন সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য উপকূলীয় এলাকায় সচেতনতা, মাইকিং, পোস্টার সাটানো হয়েছে। দেশের উপকূলীয় অন্যান্য জেলাতেও একই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর আশ্বিনের (অক্টোবর মাসে) পূর্ণিমায় দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতে প্রজনন হওয়া ইলিশ মে মাসের দিকে ১৮-২২ সেন্টিমিটার আকৃতির হয়। তখন তারা নদী ছেড়ে সাগরের দিকে ধাবিত হয়।
‘সেখানে তাদের জীবানায়ু বৃদ্ধিতে ২০ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত গভীর সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এ সময়ে একটি ইলিশ সাগরে ১২ ইঞ্চি বা এক ফুট পর্যন্ত বড় হওয়ার সুযোগ পায় এবং তাদের পেটে ডিমের সৃষ্টি হয়। একই সময়ে সাগরে অন্যান্য মাছেরও প্রজনন বৃদ্ধি পায়।’
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা পালনে জেলেদের উৎসাহিত করতে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯৫ জন জেলে প্রত্যেককে ৫৬ কেজি করে চাল সহায়তা পাবেন। এজন্য ১৬ হাজার ৭২১ দশমিক ৩২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
ভোলার মনপুরা এলাকার জেলে সোহেল মিঞা বলেন, ‘চাল বরাদ্দ হইলেও ঠিকমত হেয়া পাই না। মোগো দরকার নগদ টাহা। ৬৫ দিন কাম ছাড়া খয়রাতির মতো থাহা লাগে। হাতে কোনো টাহা পয়সা থাহে না। এর জন্য সরকার টাহা দেলে বেশি লাভ হইবে।’
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ইকবাল হোসেন মাতুব্বর বলেন, শুধুমাত্র চাল দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করা যায়না। গতকাল তিনি মৎস্য ভবনের সভায় জেলেদের ৫৬ কেজি চাল সহায়তার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ক্রয়ে নগদ অর্থ সহায়তা দরকার।