চট্টগ্রামে ৭৭ বছর বয়সী বাবাকে গলা টিপে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মো. হাসানের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মামলার বাদী লোকমান হোসেন বলেছেন, আপস হওয়ার মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোমবার জামিন নিয়েছেন তার ছেলে হাসান। জামিনে মুক্ত হওয়ার পর মামলা তুলে নিতে চাপও দিচ্ছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন লোকমান।
মামলা সংশ্লিষ্টরা জানান, সোমবার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে আপসের তথ্য দিয়ে জামিন আবেদন করে আসামিপক্ষ। শুনানি শেষে ৫০০ টাকার বন্ডে ২ জন জিম্মাদারের জিম্মায় হাসানকে জামিন দেয় আদালত। তবে ওই দুই জিম্মাদারের নাম-পরিচয় কোথাও উল্লেখ ছিল না।
মামলার বাদী লোকমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসানকে আমি মঙ্গলবার দুপুরে বাড়িতে দেখে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে আসামিপক্ষের প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সোমবার মামলার জামিন শুনানি হয়েছে। তবে ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরার স্বাক্ষরে আগের দিন প্রকাশ করা ভার্চুয়াল কোর্টের শুনানির তালিকায় এই মামলার নম্বরটি ছিল না।
‘এ কারণে শুনানির বিষয়টি আমার আইনজীবীও জানতে পারেননি। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে সোমবার বাদীপক্ষের অনুপস্থিতিতে আপসের ভুয়া তথ্য আদালতে উপস্থাপন করে জামিন আবেদন করে আসামিপক্ষ। পরে আদালত আসামি হাসানের জামিন দিয়ে দেয়।’
১৬ মে প্রকাশিত ভার্চুয়াল শুনানির তালিকায় মামলার নম্বর না থাকলেও পরদিন কীভাবে শুনানি হলো তা জানতে নিউজবাংলা কথা বলেছে সংশ্লিষ্ট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মকসুদের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘তালিকায় মামলার নম্বর নেই। সেটি বাদীর আইনজীবী মঙ্গলবার আমাকে বলার পর জানতে পেরেছি। ওই দিন যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি বা কম্পিউটার অপারেটর হয়ত ভুলে মামলার নম্বরটি তালিকায় তোলেননি।’
কারা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৬ তারিখ প্রস্তুত করা ১৭ তারিখের ভার্চুয়াল শুনানি তালিকায় মামলাটির নম্বর ছিল না, এটা ভুল কথা। মামলাটার নম্বর ঠিকই ছিল। টাইপগত ভুলের কারণে মামলা নম্বর ৭(০৫)২০২১ এর আগে ‘‘লোহাগড়ার" স্থলে ‘‘জোরারগঞ্জ" লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এ রকম টাইপগত ভুল হতেই পারে। এটা কেউ ইচ্ছাকৃত করেনি।'
এ বিষয়ে জানতে হাসানের মোবাইল ফোন নম্বরে বুধবার কল করার পর সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার স্ত্রী নাছিমা আক্তার দাবি করেন, হাসান বাড়িতে নেই।
নাছিমা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার শ্বশুর আমার স্বামীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। তবে মামলা নিয়ে উনার সঙ্গে কোনো আপস হয়নি।’
আদালতে আপসের তথ্য কেন দেয়া হয়েছে, প্রশ্ন করলে নাছিমা বলেন, ‘সেসব আমরা জানি না। উকিল (আইনজীবী) জানেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামিনে বের হলে বাদী তথা আসামির পিতার সঙ্গে আপস করা হবে উল্লেখ করে আমরা জামিন আবেদন করেছি। ভুল তথ্য উপস্থাপনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
অন্যদিকে, বাদীর আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী বলেন, ‘১৭ মে তারিখের জন্য ১৬ মে বিকেলে প্রকাশ করা ভার্চুয়াল আদালতে শুনানির জন্য নির্ধারিত তালিকায় মামলাটির নম্বর ছিল না। আমার মক্কেলের মামলা নম্বর (লোহাগাড়া থানার মামলা নম্বর নং ৭(০৫)২০২১) তালিকায় না থাকায় আমরা ভার্চুয়াল আদালতে জুম অ্যাপে জয়েন করিনি। এই সুযোগে আদালতের কাছে আপসের ভুয়া তথ্য দিয়ে আসামিপক্ষ জামিন নেয়।’
তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত চাইলে বাদী মো. লোকমানের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন বা বাদীকে হাজির করে তার জিম্মায় আসামিকে জামিন দিতে পারতেন।’
হাসানের জামিন বাতিল করতে বুধবার আদালতে আবেদন করেছে বাদীপক্ষ। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, গত ৪ মে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের হাদুর পাহাড়া এলাকায় বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর করেন মো. হাসান। এ সময় বাবা-মাকে বাঁচাতে আসা বোনকেও মারধর করেন হাসান ও তার স্ত্রী।
এ ঘটনায় লোকমান লোহাগাড়া থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করলে পুলিশ হাসানকে গ্রেপ্তার করে। ৫ মে লোহাগাড়া থানা পুলিশ হাসানকে আদালতে হাজির করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
লোকমান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাসান এর আগেও বিভিন্ন সময় আমাদের মারধর করেছে। এবার জামিনে বের হয়ে সে আমাদের হুমকি দিচ্ছে।’