বরিশালের নথুল্লাবাদে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। সেখানে এখন বাসের তুলনায় তিন চাকার যানবাহনের উপস্থিতিই বেশি। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ঢাকাগামী যাত্রীরা এসব যানবাহনে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা শুরু করছেন। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যাত্রীরা ভিড় করছেন টার্মিনালে। ঈদের পরদিন থেকেই ভিড় বাড়ছে।
জেলার ভেতরে চলাচল করা বাসগুলোতে তেমন ভিড় নেই। ঈদে বাড়িতে আসা পরিবারগুলো এখন ঢাকাসহ কর্মস্থলে ফিরতে মরিয়া। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় তারা বেশ ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকাংশ মানুষ রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন থ্রি-হুইলারে। অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাসে করেও যাচ্ছেন অনেকে। মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ ছোট যানবাহনের চলাচল বাড়াচ্ছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
সরেজমিন বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দেখা যায় হাজার হাজার যাত্রীর উপস্থিতি। পুলিশের উপস্থিতিতেই যাত্রীরা গাদাগাদি করে রওনা হচ্ছেন মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সে। অনেকে যাচ্ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। এসব ক্ষেত্রে তাদের ভাড়া গুনতে হচ্ছে কয়েক গুণ বেশি।
ঈদ উদযাপন করতে বরিশালে আসা মানুষগুলো ফেরার পথেও ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঝুঁকি জেনেও তারা থ্রি-হুইলারে বরিশাল থেকে রাজধানীর উদ্দেশে যাত্রা করছেন।
বরিশাল শহরে এখন থ্রি-হুইলারের স্ট্যান্ড হয়ে গেছে নথুল্লাবাদ। টার্মিনালের আশপাশ থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত যেতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে।
ঢাকার মিরপুরে বাস করা প্রকৌশলী মাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের সাত দিন আগে বরিশালে এসেছিলাম। তা-ও বেশ ধকল সয়ে। এখন অফিস খুলেছে। দুই দিন ধরে ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। স্ত্রী আর সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় যাব থ্রি-হুইলারে করে। রিজার্ভ করেছি ৩ হাজার টাকায় মাওয়া ঘাট পর্যন্ত। সেখান থেকে আবার বিকল্প উপায়ে যেতে হবে মিরপুর।’
রাফাতা ইসলাম শিমু নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘থ্রি-হুইলারে করে মাওয়া ঘাটে যাচ্ছি। জনপ্রতি ২০০ টাকার ভাড়া তারা চেয়েছে ৬০০ করে। কিছু করার নেই ঢাকায় যেতেই হবে। তাই বেশি ভাড়াতেই পরিবারের ৪ সদস্য যাচ্ছি।’
আরেক যাত্রী জোহরা ইসলাম বলেন, ‘পটুয়াখালী থেকে লেবুখালী ফেরি পার হয়ে সেখান থেকে বাসে করে রুপাতলী বাস টার্মিনালে এসেছি। এরপর অটোরিকশায় নথুল্লাবাদ। ঈদের ছুটিতে এসে বড় ভুল করেছি। আসতে ভোগান্তি, যেতেও ভোগান্তি। রাত ৮টার দিকে একটা অ্যাম্বুলেন্স পেয়েছি। সেটাতে করেই পরিবার সদস্যরা মাওয়া যাব।’
নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের ভূরঘাটা কাউন্টারের সামনে থেকে মঙ্গলবার রাতে যাত্রী ওঠাতে দেখা যায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে। চালক সিদ্দিক বলেন, ‘রোগী নিয়ে ঢাকা থেকে বরিশালে এসেছিলাম। এখন ফাঁকা গাড়ি নিয়ে ঢাকা যেতে হবে। তাই কয়েকজন যাত্রী উঠিয়ে নিছি। পুলিশ আর স্ট্যান্ডের লোকজনকে ম্যানেজ করেই যাত্রী উঠাইছি। ভাড়া সামান্য বেশি নিছি।’
সিএনজি চালক মানিক বলেন, ‘মহাসড়কে তো সবই চলে। মোরা চালাইলে সমস্যা কি? মোগো কেউ আটকায় না। স্ট্যান্ড হইতে টাহা দেয়া শুরু করি। পথে পথে টাহা দেতে দেতে যাই। হেই অনুযায়ী ভাড়াও বেশি নেওয়া লাগে।’
নথুল্লাবাদের বাসশ্রমিকরা জানান, জেলার ভেতরে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। দূরে না গেলেও তাদের মহাসড়ক ব্যবহার করতে হয়। মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার জাকির আলম মজুমদার বলেন, ‘ঈদ শেষে মানুষের এখন ঢাকায় ফেরার তাড়া। যাত্রী নিরাপত্তার জন্য আমরা যথাসাধ্য কাজ করছি। চেকপোস্ট রয়েছে মহাসড়কে।’