পটুয়াখালীতে সরকারি চাল আত্মসাৎ মামলায় কারাগারে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ারসহ ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান।
জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে ছোট বিঘাই ইউপি চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের মুক্তি এবং তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
তাদের দাবি, একটি প্রভাবশালী মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং আগামী ইউপি নির্বাচনে আলতাফ হোসেনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটি সাজিয়েছে। এটি ‘সাজানো নাটক’।
ছোট বিঘাই ইউনিয়নের জেলেদের জন্য বরাদ্দের চাল বিতরণের সময় গত বৃহস্পতিবার ১৩ বস্তা চাল কম পান সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) লতিফা জান্নাতিসহ অন্য কর্মকর্তারা। চাল কম পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দেন।
উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান পরে পটুয়াখালী সদর থানায় চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় রোববার আলতাফ হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, গত বৃহস্পতিবার ইউনিয়নের ৪৫০ জেলের জন্য ৩৬ টন চাল সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে নেন চেয়ারম্যান আলতাফ। ৫০ কেজির ৭২০টি বস্তায় সেই চাল সকালে ট্রলারে করে ওই ইউনিয়নে আনা হয়। তবে ট্রলারের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হওয়ায় ১৩ বস্তা চাল খাদ্য গুদামে রেখে যান ট্রলার মালিক।
ওই দিন দুপুরে এই চাল বিতরণের কথা ছিল। তবে চাল কম আছে জানিয়ে বিতরণে বাধা দেন স্থানীয় বাচ্চু ও ইউপি সদস্য আসলামের সমর্থকরা।
তারা জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলে ইউএনও, ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা ও মৎস্য কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে ১৩ বস্তা চাল কম থাকার কারণ কর্মকর্তাদের জানান চেয়ারম্যান আলতাফ। পরে ওই চাল এনে জেলেদের মধ্যে বিতরণের নির্দেশনা দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন ইউএনও লতিফা জান্নাতিসহ অন্য কর্মকর্তারা।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর অন্য ট্রলারে ওই ১৩ বস্তা চাল আনা হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে জেলেদের মধ্যে সব চাল বিতরণ করে মাস্টার রোলে ট্যাগ অফিসার ও ইউপি সদস্যদের সই নেয়া হয়। এরপরও মামলা ও চেয়ারম্যান আলতাফকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যানরা অভিযোগ করেন, যে ট্যাগ অফিসার জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণের মাস্টার রোলে সই করেছেন, তাকেই আবার চাল আত্মসাতের মামলায় স্বাক্ষী রাখা হয়েছে।
তাদের দাবি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একজন গ্রাম আদালতের বিচারক। কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর পক্ষ না নেয়ায় তার সম্মান ক্ষুণ্ন করতে এ ঘটনা সাজানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার ১১ ইউপি চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. সোহেল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোহানা হোসেন মিকি এবং চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন হাওলাদারের স্ত্রী শিবলীর নাহার সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র হাওলাদার জানান, চাল বিতরণ শেষ হওয়ার পর তিনি মাস্টার রোলে সই করেছেন। তবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের মামলায় সাক্ষী করার বিষয়টি তার জানা নেই।
মামলার বাদী সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজর রহমান জানান, ১৩ বস্তা চাল কম পাওয়ার সময় ট্যাগ অফিসার উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি লিখিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে আসার পর ওই চাল বিতরণ করা হওয়ায় ট্যাগ অফিসার মাস্টার রোলে সই দিয়েছেন। এ কারণে তাকে মামলা এবং সাক্ষী রাখার বিষয়টি জানানো হয়নি।
পটুয়াখালী সদর খাদ্য গুদামের ইনচার্জ শাহাদৎ হোসেন জানান, ট্রলারে সংকুলান না হওয়ায় ওই ১৩ বস্তা চাল গুদামের সামনেই রাখাছিল। পরবর্তীতে ট্রলারে করে তা নিয়ে যাওয়া হয়।
ইউএনও লতিফা জান্নাতি জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে ১৩ বস্তা চাল কম পেয়েছি এবং সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।