নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় বিন্দি জাল চুরির অভিযোগে মাতব্বরদের নির্দেশে পাঁচ কিশোরকে নির্যাতনকারী সেই চৌকিদার আমির হোসেনকেও কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। নির্যাতনের ওই ঘটনায় সোমবার পাঁচ মাতব্বরকেও কারাগারে পাঠায় আদালত।
উপজেলার চরকিং ইউনিয়ন থেকে মঙ্গলবার সকালে আমিরকে আটক করে পুলিশ। বিকেল ৩টায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
১৬ মে বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার গ্রাম্য সালিশে কিশোর জেলেদের রশি দিয়ে বেঁধে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানোর ঘটনা ঘটে।
পাঁচ কিশোরকে নির্যাতন করার ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটেও ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর সোমবার নির্দেশদাতা পাঁচ মাতব্বরকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
কারাগারে পাঠানো চৌকিদার আমির হোসেনের বাড়ি উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
হাতিয়া থানার বারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের জানান, এ ঘটনায় গত রোববার রাতে নির্যাতনের শিকার কিশোর শিশুপদ দাসের বাবা হরিপদ দাস বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন।
মামলার ছয় আসামিকেই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ওসি আবুল খায়ের।
যা ঘটেছিল
চরকিং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, কয়েক দিন আগে পাঁচ কিশোর মিলে এক জেলের একটি বিন্দি জাল চুরি করে পাশের সোনাদিয়া ইউনিয়নের অন্য এক জেলের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে ওই জাল উদ্ধার করে শনিবার বিকেলে মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
এরপর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোববার সকালে জেলে পাড়ার মাতব্বর শ্রীহরি জলদাস, নেপাল চন্দ্র জলদাস, প্রিয় লাল জলদাস, বিধান চন্দ্র দাস, রায় মোহন জলদাসের নেতৃত্বে একটি সালিশি বৈঠক বসে। বৈঠকে কিশোরদের একজনকে ১০টি বেত মারার আদেশ দেয়া হয় এবং প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পরে মাতব্বরদের নির্দেশে পাঁচ কিশোরকে বেঁধে প্রকাশ্যে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান চৌকিদার আমির হোসেন।
নির্যাতনের শিকার কিশোররা হলো-উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ শুল্লকিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার বাসিন্দা সহদেব, কিরণ, শিশুপদ, সমূল্য ও রতন ।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নির্যাতনের ১ মিনিট ১১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে জেলা পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে। পরে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে হাতিয়া থানা পুলিশ রোববার রাতে এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে।
ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় জেলেপাড়ার নারী-পুরুষের সামনে পাঁচ কিশোরকে লাঠিপেটা করা হচ্ছে। এই সময় তাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য ওই পাঁচ কিশোর এবং তাদের পরিবারের নারী সদস্যরা আহাজারি করে অনুরোধ করছেন। কান্নারত নারীরা এগিয়ে আসলে তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়।