কুড়িগ্রামের উলিপুরে এক গৃহবধুকে নির্যাতন করে গর্ভপাতের অভিযোগে স্বামী ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলার পর ২২ দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বাদীর পরিবার। তবে পুলিশ বলছে, আসামিরা পলাতক থাকায় ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
গৃহবধুর পিতা মেজবাহুল আজম জানান, চার বছর আগে উপজেলার ধামশ্রেণী ইউনিয়নের দারিকা গ্রামের বাসিন্দা নাইমুল ইসলাম লিমনের সঙ্গে বিয়ে হয় তার তৃতীয় মেয়ে তামান্না বেগমের। তাদের সংসারে আড়াই বছরের এক পুত্রসন্তানও রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সংসার করার সময় স্বামী ও তার স্বজনরা প্রায়ই তামান্নাকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে দুই লাখ টাকা আনতে চাপ দিত। টাকা না আনায় তারা তামান্নাকে মারধর করাসহ মানুসিক নির্যাতন চালায়।
মেজবাহুল আজম জানান, কিছুদিন পরেই তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তামান্না বেগম। বিষয়টি জানতে পেরে স্বামী লিমন ক্ষিপ্ত হয়ে গর্ভের সন্তান নষ্টের জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন।
তিনি বলেন, ‘২১ এপ্রিল স্বামীর পরিবারের লোকজন আবারও যৌতুকের টাকা আনার তামান্নাকে চাপ দেয়। এ সময় টাকা আনতে অস্বীকৃতি জানানোয় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সকলে মিলে মারপিট শুরু করে। একপর্যায়ে গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে তামান্নার তলপেটে আঘাত করেন লিমন।’
মেজবাহুল জানান, তামান্নার রক্তক্ষরণ শুরু হলে লিমন চিকিৎসার কথা বলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে অজ্ঞাতপরিচয় একজনের বাড়িতে নিয়ে জোর করে গর্ভপাত করায়। বিষয়টি কাউকে জানালে সংসার না করাসহ মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। পরে অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ শুরু হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তামান্না।
মেজবাহুল জানান, বিষয়টি জানার পর ২৪ এপ্রিল তামান্নাকে স্বামীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান তিনি। পরে এ ঘটনায় বাদী হয়ে ২৬ এপ্রিল স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ননদের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় মামলা করেন তামান্না।
তামান্না বলেন, ‘মামলার ২২দিন পেরিয়ে গেলেও নির্যাতনকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কে রয়েছি। তারা আমাকে মামলা তুলে নেবার জন্য হুমকি দিয়েছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় আমার বাবা মেজবাহুল আজম পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি আবেদন করেছেন।’
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, ‘আসামিরা পলাতক থাকায় এখনও গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।’
ইউএনও নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, ‘বিষয়টি অফিসার ইনচার্জকে গুরুত্ব সহকারে দেখতে বলা হয়েছে।’