ছয় দিনের মাথায় নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় আবারও শত্রুতার জেরে পুকুরে বিষ ঢেলে একটি মৎস্য খামারের পাঁচটি পুকুরের মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার আশুজিয়া ইউনিয়নের রামপুর দুর্গাশ্রমগ্রামে হাফিজ উদ্দিনের মৎস্য খামারের পুকুরে পুকুরে শনিবার রাতে বিষ দেয়া হয়।
হাফিজ জানান, খামারের পুকুরের লিজ নেয়া নিয়ে জায়গার মালিকদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছে তার। এরই জেরে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তার ধারণা।
মাছচাষি হাফিজের দাবি, বিষক্রিয়ায় পুকুরের দেশি জাতের রুই, কাতল, কার্প, সরপুঁটিসহ প্রায় ১২ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে।
নেত্রকোণার সদর উপজেলার চন্দনকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মাছচাষি হাফিজ বলেন, কেন্দুয়া উপজেলার রামপুর দুর্গাশ্রম গ্রামের সুজন আহম্মদ খাঁ ও লালন আহম্মদ খাঁর পাঁচ একরের সাতটি পুকুর পাঁচ বছরের জন্য ১০ লাখ ২০ হাজার টাকায় লিজ নেন তিনি। পুকুরে দেশি জাতের রুই, কাতলা, কার্প, সরপুঁটিসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির মাছ চাষ করেন। এরই মধ্যে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় হাফিজকে জায়গার মালিক সুজন ও লালন আবারও পুকুর লিজ নেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। গত চুক্তির চেয়ে মূল্য বেশি ধরায় পুকুরগুলো লিজ নিতে অনীহা দেখান হাফিজ। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, শনিবার রাত ৯টার দিকে পাঁচটি পুকুরের মাছ ভেসে উঠতে থাকে। পুকুরের পাড়ে কিছু ট্যাবলেট ও একটি ট্যাবলেটের কৌটা পাওয়া যায়। এরপর স্থানীয় মৎস্যচাষি ও মৎস্য অফিসের লোকজন পানির প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হন মাছগুলো বিষক্রিয়ায় মারা গেছে।
হাফিজ বলেন, শনিবার সন্ধ্যার পর পুকুরগুলোতে খাবার দিয়ে বাড়ি চলে যান তিনি। রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে এসে দেখেন সবগুলো পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে সুজন ও লালন খাঁ নানা রকম হুমকি দিচ্ছিল আমাকে। তাদের কথামতো চুক্তিতে রাজি না হওয়ায় তারা আমার এই সর্বনাশ করেছে।’
এদিকে হাফিজের অভিযোগ অস্বীকার করে পুকুরের মালিক সুজন আহম্মেদ খাঁ বলেন, ‘তদন্ত করে দেখুক কারা এই কাজ করেছে। তদন্তে যদি আমি দোষী হই, তাহলে আমার বিচার হবে।’
রোববার বিকেলে পুকুর পরিদর্শন করে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘পুকুরের পানির প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। পানির কোনো সমস্যায় মাছগুলো মরে নাই। ধারণা করছি, মাছগুলো বিষক্রিয়ায় মারা গেছে।’
আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ মানুষের শত্রু হতে পারে, কিন্তু পুকুরের মাছগুলো তো না! যারা এই কাজটি করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষি হাফিজকে লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পেলেই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এর আগে শনিবার রাতে কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোণা ইউনিয়নের আটিগ্রামের হেলাল উদ্দিনের পুকুরে বিষ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।
মাছচাষি হেলাল উদ্দিনের দাবি, পুকুরে বিষক্রিয়ায় চাষ করা শিং ও দেশি জাতের রুই-কাতলাসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মাছ মরে গেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে তার শত্রুতা চলছিল। এর জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন পুকুরে বিষ দিয়ে সব মাছ মেরে ফেলেছে।