গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ছকু মিয়া নামে এক রিকশাভ্যান চালককে পা বেঁধে রাতভর বেধড়ক পটিয়ে হাত-পা ও দাঁত ভেঙে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে দাদন কারবারী ছয় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের পূর্ব দামোদরপুর (পাতারীবাড়ি) গ্রামে শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
তারা জানান, গ্রামের ছয় ভাই আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় দাদনের (সুদ) কারবার চালিয়ে আসছেন। সুদের টাকায় তারা অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়ে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় মন্টু মিয়ার মেয়ে প্রতিবেশী ছকু মিয়ার ছেলের সঙ্গে পালিয়ে যান। কিছু সময় পর মন্টুসহ তার পাঁচ ভাই আলমগীর আংগুর, রনজু, মনজু ও সনজু দলবেঁধে ছকু মিয়ার বাড়িতে যান। তারা ছকু মিয়াকে রাতভর এলোপাতাড়ি পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। এ সময় তার এক হাত ও এক পা ভেঙে যায়। ভেঙে পড়ে যায় একটি দাঁতও।
রাতভর নির্যাতনের পর সকাল থেকেই ছকু মিয়ার বাড়িতে তাকে জিম্মি করে রাখা হয়। রোববার বিকেল ৫টার দিকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ছকুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
ঘটনার তথ্য সংগ্রহের সময় এ প্রতিবেদকের ওপরও হামলা চালান দাদন কারবারী আলমগীর ও তার ভাই রনজু। পরে স্থানীয় লোকজনের তোপের মুখে তারা চলে যেতে বাধ্য হন।
পরে মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে হত্যার হুমকি দেন মন্টু মিয়া।
নির্যাতনের শিকার ছকু মিয়া বলেন, ‘মারছে সারা রাত। সকাল ৭টা পর্যন্ত ডাংগাছে (মারছে)। বড় দেওয়ানিকো (কাসেম-ভাই) দুই তিনটে ডাং মারছে। কালকে রাত মনে কর যে, ৭টা খাকি শুরু। সারা রাত আর সকাল ৭টা পর্যন্ত মারছে।’
ছকু মিয়ার পরিবারের অভিযোগ, রাতভর নির্যাতনে ছকু মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পানি পর্যন্ত খেতে দেয়া হয়নি। শরীরে শত ক্ষত নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।
এদিকে রোববার সকালে সাদুল্লাপুর থানায় ছকু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ করা হয়েছে।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে সাদুল্লাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম বলেন, 'খবর পেয়ে ছকু মিয়ার খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।'
ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নবীনেওয়াজ বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার রিকশাভ্যান চালক ছকু মিয়াকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’