করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম নিষিদ্ধ থাকলেও তা উপেক্ষা করে নেত্রকোণার মদনে এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে রোববার ভোরে আয়োজন করা হয় ষাঁড়ের লড়াই।
সূর্যের আলো ফোটার আগে আগে উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের মাখনা গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রোমানের বাড়ির সামনে আয়োজিত এই লড়াই দেখতে আশপাশের গ্রামের শিশুসহ ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষ জড়ো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা নিউজবাংলাকে বলেন, ষাঁড়ের লড়াই নেত্রকোণার সামাজিক ঐতিহ্যের অংশ। স্থানীয়ভাবে একে আড়ং বলা হয়। গ্রামবাসীর কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজনের কথা আগে থেকে মানুষের মুখে মুখে প্রচার পায়। এতে রোববার ভোরের আলো ফোটার আগে থেকেই চেয়ারম্যান আতিকুরের বাড়ির সামনের ফাঁকা মাঠে মানুষ জড়ো হতে থাকে। এরপর শুরু হয় লড়াই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষ সেখানে ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, বেশির ভাগ মানুষ এসেছে ষাঁড়ের লড়াই দেখতে। তবে নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থান থেকে পেশাদার জুয়াড়িরাও আসে। তারা ষাঁড়ের লড়াইকে সামনে রেখে জুয়া খেলেন।
তার বাড়ির সামনে ষাঁড়ের লড়াইয়ের এই আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান বলেন, ‘বাড়ির সামনে ষাঁড়ের লড়াই হচ্ছে শুনে আমি ঘুম থেকে উঠে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি নায়েকপুরের পশ্চিমপাড়া গ্রামের সাদ্দামের ষাঁড়ের সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জের দুলালের ষাঁড়ের লড়াই হচ্ছে। পরে আমি লড়াই ভেঙে দিই।’
কারা এই আয়োজন করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাখনা ও নায়েকপুর গ্রামের কয়েকজন এই আয়োজন করেছে। জুয়া খেলার বিষয়টি নিয়ে আমি কিছুই জানি না।’
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম জানান, ষাঁড়ের লড়াইয়ের বিষয়টি তার জানা ছিল না। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসির তথ্যেরভিত্তিতে এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়। তবে ততক্ষেণে আড়ং ভেঙে যায়। ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
তবে কারা এই আয়োজনের সঙ্গে জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজনটি আমাদের না জানিয়ে করা হয়েছে। পুলিশকে বলেছি, এর সাথে যে বা যারা জড়িত থাকুক, তাদের আইনের আওতায় আনতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত জুয়া খেলা হয় বলে এমনিতেই ষাঁড়ের লড়াইয়ের আয়োজন নিষিদ্ধ। তা ছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম নিষেধ। আমরা আগামীকাল (সোমবার) থেকে মাঠপর্যায়ে প্রচারে নামব যাতে কেউ এ ধরনের আয়োজন আর না করে।’