ঈদের ছুটিতে অলওয়েদার সড়ক উপভোগ করতে কিশোরগঞ্জের হাওরে ভিড় করেছেন পর্যটকরা। নির্মল বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে নিতে পরিবার ও প্রিয়জনদের নিয়ে সেখানে সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয়রাও। তবে কারও মধ্যেই দেখা যায়নি করোনার ভয়। কারও মুখেই নেই মাস্ক, নেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা।
স্থানীয় অটোরিকশাচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘যেরা যেরা অটোরিকশা দিয়া বেড়ায়, হেরা কেউই মুহে মাস্ক লাগায় না। আমরা মাস্কের কথা কইলে কয় বেডা বেশি বুঝিছ না। কিন্তু পুলিশ দেখলেই মাস্ক লাগাইয়া হেরা ভালা মানুষ।’
রেজাউল জানালেন, লকডাউনেও এই সড়ক দেখতে পর্যটকদের আনাগোনা লেগে ছিল। তাই উপার্জনও ছিল তাদের। এ কারণে তিনি বেশ খুশি। জানালেন, স্থানীয় অটোরিকশা চালকরা একেকজন প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা উপার্জন করছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই রাস্তাডা অইবার আগে আমরা ঢাহা অথবা সিলেট গিয়া কাম কাজ করা ছাড়া কোন উপায় আছিন না। আর অহন আমরার ঢাহা যাওনের দরহার নাই। নিজের বাড়িত থাইক্যে রুজী রুজগার করতাম ফারি। আল্লাহর রহমতে অহন ভালই চলতাছি। তবে ঈদের ছুডিতে আর শুক্কুর, শনিবারে রুজীডে অন্যদিনের থাইক্যে বেশি অয়।’
ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে হাওরে ঘুরতে এসেছেন তৌহিদুল ইসলাম। তিনি রাজধানীর ঢাকা কলেজে পড়েন। তার সঙ্গে আছে বন্ধুরাও।
তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে আর ইউটিউবেতো এই সড়কের দৃশ্য প্রায়ই দেখি। করোনার কারণে আসা হয়নি। এখন অনেকদিন পর ঈদে বাড়ি গিয়েছি। এলাকার বন্ধুদের নিয়ে এখন হাওরে ঘুরতে এসেছি। গাড়ি না পেয়ে পিকআপ ভাড়া করে এসেছি।’
মাস্ক নেই কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পড়া প্রত্যেকেরই উচিত। আমি নিজেও মাস্ক ব্যবহার করি। তবে অনেকক্ষণ মুখে লাগিয়ে রাখার কারণে অত্যন্ত গরমে আর সহ্য হচ্ছিল না। তাই মাস্ক খুলেই ঘুরেছি।
‘ঢাকা থেকে যে জনসমাগমের ভিতর দিয়ে এসেছি, সে হিসেবে হাওরে জনসমাগম তুলনামূলকভাবে কমই। আর হাওরের এই নির্মল বাতাসে করোনার প্রভাব তেমন পড়বে না।'
পাকুন্দিয়ার পুলেরঘাট এলাকা থেকে পরিবারসমেত ঘুরতে এসেছেন ব্যবসায়ী সোলেমান হোসেন। তিনি জানান, ব্যবসার কাজে থাকেন ঢাকায়। ঈদে ছুটিতে ছেলেমেয়ের বায়নায় হাওরে ঘুরতে এসেছেন।
সোলেমান বলেন, ‘সত্যিকার অর্থেই এই সড়কটি এবং হাওরের প্রাকৃতিক দৃশ্য যে কাউকে বাধ্য করবে বারবার হাওরে আসতে। মন চেয়েছিল কয়েকদিন হাওরে থেকে এই প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করি। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ভরা বর্ষায় আবারও হাওরে আসব।'
মাস্ক না পরার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘মাস্ক আমাদের সঙ্গেই আছে। তবে হাওরের এই খোলামেলা পরিবেশে এসে ছবি তোলার জন্য বাচ্চারা মাস্ক খুলে ফেলেছে। পরে আবার তারা মাস্ক ব্যবহার করেছে।'
অলওয়েদার সড়ক নির্মাণের পর থেকে হাওর মুখর পর্যটকদের আনাগোনায়। অন্যান্য সময় বর্ষায় ভিড় বাড়লেও এবার ঈদের ছুটিতেই দেখা যাচ্ছে এমন সমাগম।
দিনভর বিশেষ করে বিকালে সড়কজুড়ে চলে পর্যটকদের ছবি তোলার হিড়িক।
তিন উপজেলার সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখা গেছে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে। এছাড়া অষ্টগ্রামের ভাতশালা সেতু, মিঠামনের জিরো পয়েন্টের গোলচত্ত্বর, ঢাকী সেতু ও ইটনা উপজেলার ছিলনী সেতু এবং ইটনার জিরো পয়েন্টেও পর্যটকের ঢল চোখে পড়ার মতো।
লকডাউনের মধ্যে পর্যটক সমাগমে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে অষ্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম আজিজুল হক বলেন, ‘ঈদের পর থেকেই এত পরিমাণ পর্যটক সড়কটিতে ভীড় করছে যে পুলিশের পক্ষে তাদের প্রতি নজরদারি করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজারো মানুষের ভিড়ে কে কোনদিকে গিয়ে পানিতে পড়ছে, সেটাও খেয়াল রাখা যাচ্ছে না।'
তিনি বলেন, ‘সাঁতার না জানলে নদীতে না নামার ব্যাপারে এবং বেপরোয়া গাড়ি চালানো রোধ করতে মাইকিং করে পর্যটক ও স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশের টহল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে পর্যটকদের বারবার সচেতন করা হলেও খানিকটা দূরে গিয়েই মাস্ক খুলে পকেটে রেখে দিচ্ছেন। আবার পুলিশ দেখলেই বের করে মুখে লাগিয়ে নিচ্ছেন।'
দুর্ঘটনা ও করোনার ঝুঁকি এড়াতে নিজে সতর্ক থাকার পাশাপাশি ভ্রমণে আসা অন্যান্য পর্যটকদের সচেতন করার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।