দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে চলতি বছরের জুনে। নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে সেচের পানি নিশ্চিত করতে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) এক সভায় সম্প্রতি প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুনে শুরু হয়ে শেষ হবার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের শেষের দিকে। ফলে দ্রুত দরপত্র আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের এলাকা ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর এবং সেচযোগ্য এলাকা ৫ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে তিস্তা কমান্ড এলাকায় প্রথম পর্যায়ে সেচ কাঠামোসহ প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার হেক্টর সেচ নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে কমান্ড এলাকায় ৫ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর ছাড়াও আরও ৪ লাখ ২৮ হাজার ৫৯৪ হেক্টর সেচযোগ্য এলাকা সেচসুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, প্রকল্পটির আওতায় ৭৬৬ কিলোমিটার সেচখালের ডাইক শক্তিশালী করা হবে। ৭২ কিলোমিটার সেচপাইপ স্থাপন করা হবে। স্লোপ প্রোটেকশন দেওয়া হবে ১০ দশমিক ০৮ কিলোমিটার।
বাইপাস সেচখাল নির্মাণ করা হবে ৭ দশমিক ১৩ কিলোমিটার। ২৭টি কালভার্ট নির্মাণ, জলাধার পুনঃখনন ২৭০ হেক্টর এবং সাড়ে ৯ কিলোমিটারের চ্যানেল পুনঃখনন করা হবে।
এ ছাড়া ৫২ কিলোমিটার পরিদর্শন রাস্তা মেরামত, ২০টি রেগুলেটর নির্মাণ ছাড়াও ৮৭ হাজারের বেশি গাছ রোপণ করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মনে করে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রকল্প এলাকায় ফসলের নিবিড়তা ২৩১ থেকে ২৬৮ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। এ ছাড়া ৫ দশমিক ২৭ লাখ মেট্রিক টন অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশনসুবিধাসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রায় ৭৪০ কিলোমিটার সেচখাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী সদর, সৈয়দপুর, রংপুর জেলা সদর, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া এবং দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, খানসামাসহ ১২ উপজেলায় প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমন মৌসুমে সম্পূরক সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন নিউজবাংলাকে জানান, সেচের কারণে প্রকল্প এলাকায় খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বার্ষিক গড়ে ১০ লাখ মেট্রিক টন। প্রতিবছর ডিজেল সাশ্রয় হয়েছে ১ কেটি ১৩ লাখ লিটার, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭৪ কোটি টাকা। ফসলের নিবিড়তা ১৮০ থেকে ২৩৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর এলাকাভেদে ১ মিটার থেকে ৩ দশমিক ৫০ মিটার ওপরে ওঠায় বনায়ন বৃদ্ধিসহ অভ্যন্তরীণ নদীগুলোয় সারা বছর পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধান সেচখালগুলোর উভয় ডাইকে (পাড়) ব্যাপক হারে বনায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০ কিলোমিটার সেচখাল, ৪৫ হেক্টর এলাকা সিল্টট্রাপে (বালুর সঙ্গে পানি আসে কিন্তু পানি এবং বালু আলাদা হয়) মৎস্য চাষ হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতিপ্রসাদ ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আমরা দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ পেয়েছি। দ্রুত দরপত্র আহ্বান এবং কাজ শুরু হবে।’
জ্যোতিপ্রসাদ ঘোষ বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই অঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লবের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং প্রকল্প এলাকায় পরিবেশ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের অধিকতর উন্নতিকরণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত কয়েক লাখ মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি সাধিত হবে।