লালমনিরহাটের কুমোরপাড়ায় ঘুরছে না মাটির চাকা, রোদে শুকানো মাটির বিভিন্ন সামগ্রীতে পড়ছে না কোনো তুলির আঁচড়।
করোনা মহামারিতে কুমোররা কর্মহীন হয়ে এভাবেই কর্মচাঞ্চল্য হারিয়েছে সদর উপজেলার সরখা এলাকার কাকিনা কুমোরপাড়া। মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫০টি পরিবার আছে এখানে।
মৃৎশিল্পী মিনতি রাণী পাল বলেন, ‘হামরা কী করি চলি বাচ্চাকাচ্চাক নিয়া। খুব কষ্টে দিন যাবার লাগছে। নিজেরাই কী খাই আর ছেলেমেয়েদের কী খাওয়াব তা নিয়ে চিন্তায় আছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে হয়তো না খায়ে মরতে হবে। হামরা সামান্য রোজগার দিয়ে জীবন চালাই, এখন তাও বন্ধ।’
বিভিন্ন জায়গা থেকে মাটি কিনে এনে তৈজসপত্র তৈরি করে তা হাটে-বাজারে বিক্রি করেন কুমোররা। এখন মানুষের হাতে টাকা কম থাকায় এগুলো বিক্রি প্রায় বন্ধের পথে।
বছরের মূল ব্যবসা হয় বাংলা নববর্ষে। কিন্তু মহামারিতে বৈশাখী আয়োজন বন্ধ থাকায় অগ্রীম বায়নাও বাতিল হয়ে গেছে।
এখন ধারদেনা করে চলছে কুমোরদের জীবন। অনেকেই চেষ্টা করছেন পেশা পরিবর্তনের।
মৃৎশিল্পী দিলীপ পাল জানান, এমনিতেই প্লাস্টিকের পণ্যের ভিড়ে তাদের পণ্যের চাহিদা কম। তার ওপর করোনার কারণে তাদের কাজ একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে তৈরি করে রাখা পণ্যগুলো বিক্রির জন্য অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না।
দিনেশ চন্দ্র পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করেনার জন্তে হামরা কীভাবে চলমো। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে কীভাবে বাঁচমো। করোনায় বসি বসি চলছে হামার দিন। হামরা এ্যালা (এখন) কী করি খাই! সংসার চলার মতো কোনো পথও নাই।
‘সরকার থেকি (থেকে) কোনো সহযোগিতাও পাই না হামরা। এমন করি বসি থাকলে আয়-রোজগার না হইলে, কেমন করি (কীভাবে) পরিবার নিয়া বাঁচমো হামরা? হামরা খুব কষ্টে আছি।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘করোনাভাইরাস সবকিছুই পাল্টে দিয়েছে। এবার বৈশাখসহ কোনো পূজাপার্বনই হয়নি। মূলত এই সময়গুলোতে মাটির জিনিসের চাহিদা বেশি থাকে। তখন মৃতশিল্পীদের ভালো উপার্জন হয়। তাদের এই দুঃসময়ে সরকারিভাবে চাল, ডাল, তেল, আলুসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।’