মেঘনা নদীর গর্ভে ২০১৬ সালে বিলীন হয়ে গিয়েছিল পুরো ইউনিয়ন। সেখানে চর জাগার পর আবারও বসতি গড়ে তোলেন ভিটেমাটি হারানো মানুষগুলো। তবে ফেরেননি সবাই।
যাতায়াত সমস্যা ও ভাঙনের শঙ্কায় ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ থাকেন অন্য এলাকায়। এমনকি চেয়ারম্যানও থাকেন পাশের ইউনিয়নে। অস্থায়ী ইউপি পরিষদও সেখানে।
বরিশালে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা থেকে নদীপথে ১০ কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীবেষ্টিত গোবিন্দপুর ইউনিয়ন এটি।
ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, নদীবেষ্টিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের মধ্যে যাতায়াতের সবচেয়ে দুর্গম পথ গোবিন্দপুর ইউনিয়নের। ভোটার সংখ্যার তুলনায় এখানে খুব কম থাকার অন্যতম কারণ উত্তাল নদীতে নৌনির্ভর যাতায়াত। যা আবার নির্ভর করে তিথির উপর। তিথি নক্ষত্র, অমাবশ্যা ও পূর্ণিমা দেখে যাতায়াত করতে হয় এই এলাকার মানুষকে।
তারা আরও জানান, উত্তাল মেঘনা নদী ঘেরা এই ইউনিয়নে বর্তমানে প্রায় ৪০০ পরিবার বাস করে। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই থাকেন পার্শ্ববর্তী উলানিয়া ইউনিয়ন, ভোলা ও লক্ষ্মীপুর জেলায়। ভোটের সময় এদের আনা হয় লঞ্চে করে। গোবিন্দপুর ইউনিয়নের নির্বাচনি প্রচারও হয় মূলত উলানিয়ায়।
গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন তালুকদার নিউজবাংলাকে জানান, ১৯৯০ সালে এই ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার। মেঘনায় ভাঙনের কবলে ২০১১ সালে ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫০০।
তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালে ভাঙনে পুরো ইউনিয়ন বিলীন হয়ে যায়। নতুন করে চর জেগে ওঠার পর বসতি গড়ায় ২০১৭ সালে ভোটার সংখ্যা হয়েছে ১১ হাজারের মতো।
চেয়ারম্যান থাকেন অন্য ইউনিয়নে, অস্থায়ী কার্যালয়ও সেখানে
ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন তালুকদারের গোবিন্দপুরে যাতায়াত থাকলেও তিনি বসবাস করেন পাশের উলানিয়া ইউনিয়নে। মেঘনার ভাঙনে একাধিকবার গোবিন্দপুরে পৈতৃক ভিটা বিলীন হওয়ায় এখন তিনি উলানিয়াতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন।
তিনি জানান, ভাঙনে গোবিন্দপুর ইউনিয়নে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক। মেঘনার গর্ভে গেছে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি হাইস্কুল, তিনটি মাদ্রাসা, ৬০টি মসজিদ, তিনটি বাজার, একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। রাস্তার হিসাব বলা সম্ভব নয়।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে এই ইউনিয়নে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়েছে। আরও কিছু স্থাপনা গড়ে উঠেছে। উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান থাকায় অনেক মানুষ ফিরে আসছেন।
যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, গোবিন্দপুরে তাদের পূর্ণিমা আর অমাবশ্যা দেখে যাতায়াত করতে হয়। কেননা ওই সময় প্রচুর ঢেউ থাকে মেঘনায়। ট্রলার বা স্পিডবোটে এই নদী পাড়ি দেয়াটা খুবই ভয়ানক। এমনকি এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই ইউনিয়নের কেউ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোথাও যাতায়াত করেন না। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিতে ভোগান্তির শেষ থাকে না।
অস্থায়ী ইউপি কার্যালয় অন্য ইউনিয়নে থাকার বিষয়ে বলেন, গোবিন্দপুরের বেশির ভাগ ভোটার উলানিয়ায় থাকেন। ভয়ংকর নদী পাড়ি দিতে হয় বলে নির্বাচনের সময় ঝুঁকি এড়াতে প্রচারও চলে উলানিয়ায়। শুধু ভোট গ্রহণের সময় বাসিন্দারা গোবিন্দপুরে যান।
প্রত্যন্ত এ ইউনিয়ন নিয়ে অবশ্য আশার কথা শুনিয়েছেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ।
তিনি জানান, এ ইউনিয়ন নিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হবে। সেটি হলে মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে এখানে। পাল্টে যাবে এখানকার রূপরেখা।
যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করার বিষয়ে সংসদ সদস্য জানান, গোবিন্দপুরের কালীগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে হিজলা পর্যন্ত ফেরি চালু করা গেলে চট্টগ্রামের সঙ্গে বরিশালের যাতায়াত সহজ হবে। এই রুট বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যবসায়ীদের জন্য চট্টগ্রাম থেকে বরিশালে আসা-যাওয়া সুবিধাজনক হবে। সেক্ষেত্রে নানা দিক থেকে উপকৃত হবে মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলাবাসী।
গোবিন্দপুরকে ঘিরে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে চেষ্টার কোনো কমতি নেই বলেও জানান তিনি।