বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সামনে যে ঈদ হামার খুব কষ্ট

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ২৩:০৬

‘সারাদিন তো আমরা রোজা থাকি। ছেলে মেয়েদেরকে নিয়া যে ইফতার করব সে সুযোগ হয় না। আর ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে ঈদ করার মতো কোনো ব্যবস্থা নাই। জামা কাপড় তো চায়। কিন্তু দেয়ার মতো তো কোনো বুদ্ধি নাই।’

তিস্তা ও ধরলা চর এলাকায় ঈদ উৎসবের রঙ লাগেনি।

নুতন পোশাক তো দূরের কথা, সেমাই চিনি কেনার কথাও ভাবতে পারছেন না কেউ কেউ।

লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ায় আয় নেই তাদের। ঋণের টাকা নিয়ে চালাতে হচ্ছে খাওয়া-দাওয়া।

সন্তানরা নতুন পোশাকের জন্য আবদার ও কান্নাকাটি করলেও নিরূপায় অভিভাবকরা।

রোজায় ইফতার চলেছে পান্তা ভাত, চাল ভাজা, ভুট্টা ভাজা, চিড়া ভেজা দিয়ে। সেহরিতে অনেকের কপালে ভাত জুটলেও তরকারি জোটেনি।

তিস্তা পাড়ের জেলে মতি মিয়া বলেন, ‘আমাদের বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে ঈদের আয়োজন করার মতো কোনো বুদ্ধি নাই। আমরা চরের মানুষ। আমাদের সেই টাকা-পয়সাও নাই। আমাদের সেই চলার মতো কোনো গতি নাই। আমরা সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতাও পাই নাই।’

আর এক কৃষক বলেন, ‘সারাদিন তো আমরা রোজা থাকি। ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়া যে ইফতার করব সে সুযোগ হয় না। আর ছেলে-মেয়েদেরকে নিয়ে ঈদ করার মতো কোনো ব্যবস্থা নাই। জামা-কাপড় তো চায়। কিন্তু দেয়ার মতো তো কোনো বুদ্ধি নাই।’

পুরনো কাপড় পরেই খেলায় মগ্ন তিস্তা পারের শিশুরা। ছবি: নিউজবাংলা

তিস্তা পাড়ের নোরল মিয়া বলেন, ‘পরিশ্রম করার পর বাজার করার মতো ট্যাকা-পয়সাও আমাদের মিলে না। ঈদ কীভাবে কাটাব তা বলতে পারতেছি না। কারণ, আমাদের ট্যাকা পয়সার খুব কষ্ট।

‘আমরা ঈদের দিন যে সেমাই চিনি কিনব, সে ট্যাকা পয়সাও মিলাইতে পারি না। তাহলে আমরা মার্কেট কীভাবে করব এবং কাপড়চোপড় কিনব?

‘হামরা যে রোজা-টোজা করি হামরা মাছ টাস মারি খ্যায়া ট্যায়া করি। সামনে যে ঈদ হামার খুব কষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘কোনো কেনাকাটার টাকা-পয়সা নাই। বাচ্চা-কাচ্চাক কীভাবে কাপড়চোপড় দিব? যদি হামার বাঁধটা হইত তাহলে আর সরকার থাকি কোনো সাহায্য সহযোগিতা লাগত না।’

জোহরা বেগম বলেন, ‘এ যে এক পোয়া চাইল চড়ে দিছি। কোনো খাবার-টাবার নাই। মাইনষের কাজ করি। এক পোয়া চাইল চরেয়া পাট শাক চরে দেই।’

নদী ভাঙ্গা এলাকার দুলালি বলেন, ‘হামরা নদী ভাঙ্গা এলাকার মানুষ। কষ্ট করি আছি। যাচাই-বাছাই করিয়া যাকে মন চাইলে তাকে দেয় (সাহায্য)। হামরা কী বলি, কাকে বলি? বলার কিছুই নাই। টাকটুক করিয়া তো চইলবার নাগছি। কষ্ট করিয়া চইলবার নাগছি। মনে কর করোনার সময় হামার খুব কষ্ট হইছে।’

একাদশী রাসে একজন বলেন, ‘আগে তো কিছু করছি। কিন্তু এখন কিছুই তো কইবার পারি না। মেম্বার চেয়ারম্যানের ঘর তো হামার ভিটি দেখে না। এ করি ধরি কোনো রকম রাস্তা ঘাটত বাড়ি করি আছি। ঘর যদি ভাঙি পরে তাও দেইকপার আসে না। রিলিপ সিলিপ কোনো পাইও না, কইও না। যদি মেম্বারের কাছোত যাই, না, তোমার নাম নাই। এ জন্য হামরা যাইও না। যদি যাচি দেয় দিলে ত নিন হয়। দেয়য়ে না তা নেই কেমন করি।’

আলেয়া বেওয়া বলেন, ‘আস্তাতে আছি ভাই। স্বামী নাই পৃথথোক খাই। করোনা এক বছর থাকি। কোনো বুদ্ধি নাই। পাটের কাজ করি খাই। কাঁইয়ো দেখাইয়া নাই আমার। দিন যেয়া খাই, রাই যেয়া খাই। এক বেলা খেয়া কোনো মতে থাকি।’

জরিনা বেগম বলেন, ‘কাঁইয়ো একনা খোঁজ খবর করে না। কষ্টত আছি। রাস্তাত বাড়ি করি থাকিয়া আছি। এক বেলা করি, এক বেলা খাই। সরকার ম্যালা সুযোগ-সুবিধা দিবার লাগছে, হামরাত কিছুই পাইনো। ঈদ উপলক্ষে টাকা-পয়সা পায় হামরাত কোনো কিচ্ছুই পাইনো। হামার টাকাও নাই, হামার ঈদও নাই, কোনোয় নাই।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে সারা বাংলাদেশের মত লালমনিরহাট জেলায়ও বিভিন্ন ইউনিয়নের জন্য ভিজিএফ ও জিআর সহায়তা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭৬ হাজার পরিবারকে ভিজিএফ এর সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি এ জেলায় ৫০ হাজার পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে।

‘এবারের ঈদেও সরকারিভাবে অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হলেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এ বিভাগের আরো খবর