‘বাড়িতে আমার ১২ বছরের একটি বাচ্চা আছে। সে প্রতিদিনই কাঁদছে নানির কাছে। আমি বলেছি, তাড়াতাড়ি চলে আসব। আমার মেয়ের ঈদ কেমন কাটবে, এটা ভাবতেই খুব কান্না পাচ্ছে।’
এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা জানাচ্ছিলেন ঈদের সময়ও মাগুরার একটি হোটেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারতফেরত এক নারী।
ওই নারী ছাড়াও মাগুরায় কোয়ারেন্টিনে ঈদ করবেন বিভিন্ন এলাকার ১০০ জন। কোয়ারেন্টিনের ১৪ দিন শেষ না হওয়ায় হোটেলেই স্বজন ছাড়া ঈদ করতে হচ্ছে তাদের।
ভারতে করোনাভাইরাসের উচ্চ সংক্রমণের কারণে সেখান থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় দেশে আসা মানুষদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। দেশের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রাখা হয়েছে ভারতফেরতদের।
তাদের মধ্যেই মাগুরার বিভিন্ন হোটেলে রয়েছেন ১০১ জন। এ সব মানুষদের অধিকাংশই ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। তবে দেশটিতে করোনার উচ্চ সংক্রমণের কারণে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
মাগুরায় গত শনিবার রাতে প্রথম ৫০ জনকে শহরের ঈগল ও সৌকত হোটেলে রাখা হয়। সোমবার আরও ৫১ জনকে মন্ডল হোটেলসহ দুটি হোটেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখে জেলা প্রশাসন।
এভাবে ঈদ করতে হচ্ছে, তাই তাদের অধিকাংশই বিষণ্ন। তবে অনেকে বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছেন। দেশ ও দশের ভালোর কথা চিন্তা করে।
মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত ওই নারী বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে ভারত গিয়েছিলাম। দুজনই গিয়েছিলাম চিকিৎসার কাজে। এক মাস থেকেছি। চিকিৎসা বাকি ছিল। কিন্তু ওখানকার ডাক্তার বললেন, করোনা কমলে তিনি দেখবেন। তাই চলে এসেছি। এসেই তো আটকে গেলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু কী আর করার আছে। সবাইকে নিরাপদ রাখতে আমাদের এটা মানতেই হবে। এই ঈদ না হয় এভাবেই বন্দি হয়ে কাটালাম। বেঁচে থাকলে অনেক আনন্দ করা যাবে। এই বলে মেয়েকে বুঝ দিয়েছি।’
রাজবাড়ীর একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি গিয়েছিলাম ভারতে নিজের শারীরিক সমস্যার কারণে। সামনে আমার বিয়ে। ডাক্তার দেখিয়ে ফিরতেই ভারতে করোনার প্রকোপ বেড়ে গেল। চিকিৎসা অর্ধেক রেখে ফিরে এলাম দেশে। কিন্তু এখন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে কাটাতে হচ্ছে।
‘ঈদে বাড়ি যেতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে। ছোট ভাই এসছিল। মনে হচ্ছে আমি জেলখানায় আছি।’
ভারতফেরত যাত্রী হিমেল আছেন মাগুরা সৈকত হোটেলে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পরিবারের ওপর। তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে জানার পর থেকে নাকি ঠিক মতো খোঁজই নেয়া হয়নি।
মাদারীপুরের এ যুবক বলেন, ‘আমি এখানে আটকে পড়েছি আর পরিবারের সবার ধারণা আমার করোনা হয়েছে। ফোনে বলেছে ১৪ দিন ওখানে (মাগুরায়) থেকেই বাড়ি আস। অথচ কাল ঈদ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাড়ির ছোট ছেলে। ঈদে আমাকে নিয়ে ভাই-বোনের আনন্দের সীমা থাকে না। মাগুরার নবগঙ্গা নদীর শান্ত পানি দেখেই ঈদ কাটিয়ে দেব ভাবছি। এ ছাড়া উপায় কী।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন কবীর নিউজবাংলাকে জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন তাদের যেন ঈদে ঠিক মতো আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। শুধু ঈদ নয়, যে কয়দিন মাগুরাতে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন সেই কয়দিন তাদের খাবার ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসনসহ উপজেলা পরিষদ।
মাগুরার সিভিল সার্জন শহীদুল্লাহ দেওয়ান নিউজবাংলাকে জানান, ‘ভারতফেরত সবাই দেশের নানা এলাকার মানুষ। তারা আমাদের অতিথি। তাদের ঈদ যেন ভালোভাবে যায়, সে চেষ্টা আমাদের স্বাস্থ্যবিভাগ থেকেও নেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা এসব মানুষদের বেশিরভাগই শারীরিক জটিলতায় ভারতে গিয়েছিলেন। তাই তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথম দিন থেকে ফলোআপে রাখা হয়েছে।
তবে শারীরিক জটিলতা ছাড়া করোনার কোনো লক্ষণ তাদের মধ্যে পাওয়া যায়নি বলে জানান এ চিকিৎসা কর্মকর্তা।