বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ধৈর্যের পাশে ভারত, তুষারের পাশে বাংলাদেশ কেন নয়

  •    
  • ১৩ মে, ২০২১ ১৮:০৬

ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের শিশু ধৈর্যরাজসিং রাঠোড়ের চিকিৎসার জন্য ১৬ কোটি রুপি জোগাড় হয়েছে ‍দুই লাখ ৬০ হাজার মানুষের ছোট ছোট দানে। একই ধরনের রোগে আক্রান্ত মেহেরপুরের এক তরুণ ও তার ভাগ্নে। পরিবার প্রধানের আশা ভারতবাসী যেভাবে ধৈর্যের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষও একইভাবে এগিয়ে আসবে।

ভারতে বিরল রোগে আক্রান্ত এক শিশুর জন্য দানের অর্থে ১৬ কোটি রুপির ইনজেকশন কেনার খবরে বিশেষভাবে উৎসাহী হয়েছে মেহেরপুরের একটি পরিবার।

সেই পরিবারের দুই জনেরও এমন জটিল রোগ আছে যেটি সহজে দেখা যায় না। আবার ভারতের সেই শিশুটির পরিবারের মতো এই পরিবারটিরও চিকিৎসা করানোর সঙ্গতি নেই।

ভারতবাসীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানে সেই শিশুটির চিকিৎসা এখন এগিয়ে চলছে। এই অবস্থায় মেহেরপুরের এই পরিবারটিও দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানিয়েছে, তারাও যেন একইভাবে এগিয়ে আসে।

এই রোগে পরিবারটির আরও একটি শিশু আক্রান্ত ছিল। ২০১৭ সালে রোগটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারতের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা-এনজিও শিশুটিকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। কিন্তু তাকে বাঁচানো যায়নি।

তারই ছোট ভাই এখনও এই রোগে ভুগছে। পাশাপাশি বোনের ছেলেও এখন আক্রান্ত হয়েছে।

ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদের শিশু ধৈর্যরাজসিং রাঠোড় আক্রান্ত স্পাইনাল মাস্কিউলার অ্যাট্রফিতে। মেরুদণ্ড ও স্নায়ুতন্ত্রের জটিল সমস্যা এটি। দরকার ছিল এককালীন জিন থেরাপি জোলজেন্সমা। এ জন্য ১৬ কোটি রুপিতে কিনতে হতো ইনজেকশন। কিন্তু ধৈর্যরাজসিংয়ের বাবার সামর্থ্য ছিল না। পরে দেশটির ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ মিলে এই টাকা জোগাড় করে দেন।

মেহেরপুরের যে দুই জন আক্রান্ত, তাদের রোগও একই গোত্রের। এই রোগটির নাম ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি।

জেলার সিভিল সার্জন নাসির উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফি আর ডুসিনি মাসকুলার এসট্রোফি দুটিই জেনেটিক রোগ।

এই পরিবারটি চার বছর আগে দেশে আলোচিত হয়ে উঠে পরিবার প্রধান, তার দুই সন্তানকে ওষুধ প্রয়োগে হত্যার আবেদন করার পর। তখনই শিশু দুটিকে ভারতে পাঠানো হয় চিকিৎসা করাতে।

মেহেরপুর বড় বাজারে একটি ফল ও মাছধরা ছিপের দোকান নিয়ে বসে আছেন দোকান মালিক তোফাজ্জেল হোসেন। শহরের কাথুলি রোডের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তিনি। এই দোকানের আয়ে চলে তার গোটা সংসার।

তার ছেলে রাইনুল ইসলাম তুষার আর ১০ বছর বয়সী নাতি সৌরভ হোসেন ডুসিনি মাসকুলার ডিসট্রোফিতে আক্রান্ত।

সৌরভের চিকিৎসা খরচ দেয়ার ভয়ে তার মা উম্মে সালমার সঙ্গে বিচ্ছেদ করেন স্বামী।

বিরল রোগে আক্রান্ত ধৈর্যরাজসিং রাঠোড়ের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ছবি: এনডিটিভি

তোফাজ্জেল হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, জন্মের পর থেকেই দুই ছেলে জটিল রোগে আক্রান্ত ছিল। এদের চিকিৎসা করাতে গিয়ে যা সম্পদ ছিল সব শেষ হয়ে গেছে।

সন্তান ও নাতির কষ্ট সহ্য করতে না পেরে ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসকের কাছে ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে দুই সন্তান ও নাতিকে মেরে ফেলার অনুমতি দেয়ার অথবা তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার আবেদন করেন।

সে সময় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ভারতীয় এনজিওর অর্থে তার দুই ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ভারতের দিল্লিতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তখনও এই রোগের চিকিৎসা বের হয়নি সেখানে। তার পরেও অপারেশন করিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

দেশে ফেরার পর ২০১৭ সালের ২২ জুলাই মারা যায় তোফাজ্জেলের বড় ছেলে আবদুস সবুর।

আশার সঞ্চার যে কারণে

গত ৮ মে নিউজবাংলায় প্রকাশ হয় ভারতীয় শিশু ধৈর্যরাজসিং রাঠোড়ের কাহিনি।

‘দানের অর্থে কেনা হলো ১৬ কোটি রুপির ইনজেকশন’- এই সংবাদটি পড়ে তোফাজ্জল বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে ও নাতিকে বাঁচানোর আশা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু নিউজবাংলার প্রকাশিত একটি সংবাদ আমাকে নতুন করে আশার সঞ্চার যুগিয়েছে।

‘এমন একটি জটিল রোগের চিকিৎসা খরচ নাকি জনগণের সহযোগিতায় ৪২ দিনে উঠানো সম্ভব হয়েছে। শিশুটিকে একটি ইনজেকশন দেয়া হয়েছে যার মূল্য নাকি ১৬ কোটি রুপি। তার বাবাও আমার মতো হত দরিদ্র তাও তার চিকিৎসা খরচ জমানো সম্ভব হয়েছে। তাকে দেখে আমি আশায় বুক বেঁধেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছে হাতজোড় করে বলছি, আপনারা যদি সকলে আমার অসুস্থ ছেলে ও নাতির চিকিৎসার জন্য ভারতের জনগণের মত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তাহলে আমার মতো হতভাগ্যের বাবা ডাকটা শোনার সৌভাগ্য বেঁচে থাকবে। তা না হলে পরিস্থিতি মেনে নিয়ে আমার বড় ছেলে আব্দুর শবুরের মত বুকফাটা কষ্ট নিয়ে কবর দিয়ে আসতে হবে।’

তোফাজ্জেল জানান, তিনি গত সপ্তাহে কিছু পত্রিকার কাটিং নিয়ে জেলা প্রশাসক মনসুর আলম খানের কাছে গিয়েছিলেন। তিনি তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

কী হয় এই রোগে

তোফাজ্জেলের ভাষ্যমতে, তার বড় ছেলে আবদুস সবুর ২৩ বছর বয়সে মারা গেলেও এই রোগে আক্রান্ত হয় যখন তার বয়স ছিল ১০ বছর।

সে সময়ে পায়ের শক্তি হারিয়ে ফেলে সবুর। কয়েক বছর আগে শারীরিক ক্ষমতা হারিয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।

ছোট ছেলে রাহিনুল ইসলামের শরীরে আট বছর বয়সে এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এখন তার বয়স ১৭।

তিন বছর আগে একমাত্র মেয়ের ছেলে সৌরভ হোসেন একই রোগে আক্রান্ত হয়। তার বয়স এখন সাড়ে ১০ বছরের মত।

তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘সেই সময় আমার দুই ছেলেকে ভারতের কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছি। শেষ চেষ্টা হিসেবে সৃষ্টিকর্তা ও আমার দেশের জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর