‘বেতন পাই নাই এহনও। মনে হয় পামু না। লকডাউন শুরুর আগে বাড়ি কিছু ধান কিন্না রাইখা আইছিলাম। হেইয়া দিয়াই এহন মোর বউ চলতে আছে। এবার মোগো ঈদ নাই। হেয়ার খবরও আল্লাহর ধারে। এহন লঞ্চেই থাকতে হয়। ডেইলি আলু ভর্তা, ভাত আর ডাইল দিয়াই চলে খাওন। বাড়ি যাওয়ারও সুযোগ নাই। কী করমু কিছু বোঝতে আছি না। মোরাতো লঞ্চে খাইতে পারি, যারা বাড়ি গেছে হেরা কী অবস্থায় আছে আল্লাহ মাবুদ জানে।’
আক্ষেপের সুরে নিউজবাংলাকে এসব কথা বলছিলেন ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের পারাবাত-১০ লঞ্চের সুকানি শাহাদাৎ হোসেন। নড়াইলের লোহাগড়া এলাকায় বাড়ি। বর্তমানে লুডু আর আড্ডা দিয়েই সময় কাটে তার।
আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এই লঞ্চে মোট ৪০ জন স্টাফ আছে। লকডাউন শুরুর পর লঞ্চ বরিশাল ঘাটেই আছে। নিয়ম হিসেবে এহন লঞ্চে ১৮ জন আছি। মালিক তিন বেলা খাওন দেয়। তয় মাসের ১২ তারিখ হইয়া গেলেও বেতন পাই নাই। বোনাস তো দূরের কথা।
‘নিজেগো ধারেও এহন টাহা নাই বাইরে চলার জন্য। বাড়িতো কিছু পাঠাইতে পারি নাই। হুনছি অনেকরে নাকি সহায়তা দেছে সরকার। তয় কাগো দেছে জানিনা। মোরা তো লঞ্চেই থাহি, মোরা তো কিছু পাই নাই। পকেটে টাহা নাই, এবার মোগো ঈদ নাই। লঞ্চ চললে সমস্যা হইতো না।’
একই কথা বলেন ঢাকা বরিশাল-রুটের মানামী লঞ্চের ডেক ক্রু মো. কাওছার। তিনি বলেন, ‘আমাগো লঞ্চে মোট ৭০ জন স্টাফ আছে। মালিক বেতন দেছে, তয় বোনাস পাই নাই। বেতন পাইতেও দেরি হইছে। বরিশালের এই আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট এলাকায় বাড়ি মোর।
‘১০ বছর বয়সী আন্নাফি নামে পোলা আছে মোর। ঈদ আইলেই তো প্রত্যেক বছর টাহা পাডাই। তয় এবারে তো আর বোনাস পাই নাই। পোলায় ফোন দিয়া জিগায় জামা কাপড় কিনমু কবে। যে টাহা বেতন পাইছি হেয়া দিয়া অনেক কষ্ট কইরা কিছু টাহা বাড়ি পাঠাইছি। তয় হেয়া দিয়া জামা কাপড় কেনা যাইবে না। ঈদের ভয়ে এবার বাড়িও যামু না। লঞ্চ চললে মোগো এক্সট্রা ইনকাম থাহে।’
পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও ভোলার লঞ্চ শ্রমিকদের অবস্থাও করুন। নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি আবুল হাশেম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ শ শ্রমিকের তালিকা দিছিলাম। তয় ডিসি অফিস দিয়া ৫০ জনরে দেছে। শুনছি ভুয়া শ্রমিকরা সহায়তা নেছে। তয় আসল শ্রমিকরা কিছুই পায় নাই। হেরা খুব কষ্টে আছে।
‘বাস তো চলে, কিন্ত লঞ্চ তো চলে না। করোনা মনে হয় খালি লঞ্চেই ছড়ায়। বন্ধ লঞ্চের শ্রমিকরা অনেক কষ্টে আছে। তাগো বিষয়টা সরকারের বিবেচনা করা উচিৎ। অন্তত ঈদ উপলক্ষে ওগো সহায়তা পাওয়া উচিত।’
লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানির চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে লঞ্চ শ্রমিকদের একটা তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে। তাছাড়া লোকসানের মধ্যেও মালিকরা সহায়তা করার চেষ্টা করছে শ্রমিকদের।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যে লঞ্চ শ্রমিকরা সহায়তা পায়নি বলে জানিয়েছে তারা মিথ্যা কথা বলছে। তালিকা করে আট শ লঞ্চ ও পরিবহন শ্রমিককে সহায়তা দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করার ততটুকু করেছি।’