নামের সঙ্গে মিল থাকায় কারাভোগ করেছেন নিরপরাধ আরেক ব্যক্তি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সম্প্রতি তিনি কারামুক্ত হয়েছেন। তবে এরই মধ্যে তিন মাস কারাভোগ করেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহে। যিনি কারাভোগ করেছেন তার নাম রাজিব মিয়া। এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
হালুয়াঘাট উপজেলার মনিকুড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজিব মিয়া। অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে ৯ ফেব্রুয়ারি তাকে হাতকড়া পরিয়ে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, রাজীব নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে কোতোয়ালি থানায় ডাকাতি ও অস্ত্র মামলা হয়। তখন আসামির দেয়া তথ্য অনুসারে তার ঠিকানা লেখা হয় হালুয়াঘাটের মনিকুড়া। তবে ওই আসামির স্থায়ী ঠিকানা শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ির বিজগিরিপাড়া।
আরও পড়ুন: নামের মিলে কারাভোগ, দায় নিচ্ছে না কেউ
১ বছর ৯ মাস জেল খাটার পর জামিনে ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যান রাজিব। তখন তার হালুয়াঘাটের ঠিকানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজিব মিয়া বলেন, ‘গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী ও দেড় বছরের সন্তানকে নিয়ে বিছানায় বসে খাবার খাচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ হালুয়াঘাট থানা-পুলিশ ঘরে ঢুকে আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে বলে হাতকড়া পরিয়ে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।
‘এরপর থেকে বিনা অপরাধে কারভোগ করি। জেল কর্তৃপক্ষ ওই আসামির ছবিসহ তথ্য আদালতে দাখিল করায় গত সোমবার ৪ মে ছাড়া পাই।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ হয়েও জেল খেটেছি। আমি সরকারের কাছে এর বিচার চাই।’
রাজির মিয়ার স্ত্রী হোসনে আরা বলেন, ‘পুলিশ যেই বেলা ধরতে আইছিল পায়ে ধইরা কান্নাকাটি করছি। পুলিশ বলছে ওয়ারেন্ট আছে। তিন মাস জেল খাটছে। আমার কোলের শিশু তার বাবার মুখটাও দেখবার পারে নাই। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
আরও পড়ুন: নামের মিলে প্রায় দেড় বছর কারাগারে
রাজিব মিয়ার আইনজীবী মো. আবু হানিফ খান নিউজবাংলাকে বলেন, শুধুমাত্র নামের মিলের কারণে নিরপরাধ ব্যক্তিকে কারাগারে রাখা হয়েছে- বিষয়টি আদালতকে জানানো হলে ৪ মে বিচারকের নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
‘মানবাধিকার জোট’ ময়মনসিংহ জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নামের ভুলে কারাভোগের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে। রাজিব মিয়া বিনা অপরাধে তিন মাস কারাভোগ করেছেন। এই সময় কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবেন না। তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণ করার এখতিয়ার কারও নাই। এটা নিঃসন্দেহে মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
তিনি বলেন, নামের ভুলে গ্রেপ্তার করার আগে পুলিশের আরও বেশি সতর্ক হওয়ার দরকার ছিল। বিনা অপরাধে হাজত খাটার জন্য তার যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।