ঈদের আর একেবারে দেরি নেই। বৃষ্টির পরোয়া না করেই মানুষ ছুটছে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে। কিন্তু পরিবহনের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই।
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে মঙ্গলবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ আরও বেড়েছে। ঘাটে ব্যক্তিগত গাড়ি ও পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি।
বৃষ্টিতে ভিজেই ঘাটে আসছে মানুষ। কেউ কেউ মাথা ঢেকেছেন পলিথিনে।
ঘাটে ফেরির অপেক্ষায় থাকা ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার লিলি আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা গ্রামের বাড়িতে গেছে কয়েকদিন আগে। আমরা না যাওয়ায় কান্নাকাটি করছে। তাই বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়িতে যাওয়ার জন্য ফেরির অপেক্ষা করছি। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ফেরিতে উঠতে পারি নাই।’
মাগুরার ফরিদ মিয়া জানান, গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন সবার সঙ্গে ঈদ করতে। কিন্তু পাটুরিয়া ঘাটে আসার পর থেকে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়িতে যাচ্ছেন। তবে ভিজলেও কষ্ট লাগছে না। বাড়িতে গেলে সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। কারণ মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করবেন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনে শহরগুলোতে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হলেও বন্ধ রয়েছে আন্তজেলা বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। শুধু পণ্য পরিবহনের জন্য চালু রাখা হয়েছে ফেরি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শুক্রবার রাতে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল, শনিবার থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে দিনে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। রাতে শুধু পণ্যবাহী পরিবহন পারাপারের জন্য ফেরি চলবে।
এরপর শনিবার বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান ঘোষণা দেন, ফেরিতে যাত্রী পারাপার ঠেকাতে ঘাটে থাকবে তাদের টহল দল।
তবুও ঠেকানো যায়নি ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা।
রাজবাড়ীর খোরশেদ আলম আফসোস করে বলেন, ‘ঘাট এলাকায় যদি যাত্রীদের জন্য একটু বসার জায়গা বা বিশ্রামাগার থাকত তাহলে আমাদের বৃষ্টিতে ভিজতে হতো না। কিন্তু কী আর করার! বৃষ্টিতে ভিজেই ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যদি ফেরিতে উঠতে পারি তাহলে বৃষ্টিতে ভেজার কষ্ট দূর হয়ে যাবে।’
ফরিদপুর সদরের হাসনা বেগম বলেন, ‘এমনিতেই ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে আসতে কষ্ট হয়েছে। তার মধ্যে পাটুরিয়া ঘাটে এসে ভিজতে হলো। ছাতা না থাকায় দোকান থেকে পলিথিন কিনে মেয়েদের মাথা পলিথিন দিয়েছি। মেয়েরা গ্রামের বাড়িতে ঈদ করবে তাই বাধ্য হয়ে ভিজেই যেতে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের আরিচা কার্যালয়ের উপমহাপরিচালক জিল্লুর রহমান জানান, সকালের চেয়ে দুপুরে যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ বাড়ছে। তার মধ্যে আবার বৃষ্টি হচ্ছে ঘাট এলাকায়। এতে করে যাত্রীরা বৃষ্টিতে ভিজেই অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে ফেরিতে পার হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে এখন ৮টি ফেরি চলাচল করছে। সন্ধ্যার পর সব কয়টি ফেরি চলাচল শুরু করলে ঘাটের চাপ কমতে শুরু করবে।