শেরপুর সদরের মোবারকপুর এলাকার বাসিন্দা ফুলেছা বানু। বয়স ৭৫ বছর। বিধবা হয়েছেন প্রায় ৩০ বছর আগে। জীবনের এ পর্যায়ে এসে হারিয়েছেন কাজ করার সামর্থ্য। ফলে মেয়ের ওপর ভরসা করেই দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাকে।
ভাঙা বেড়া আর পুরনো কাপড় মোড়ানো একটি ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ফুলেছা বানু। কানে শোনেন না; চোখেও দেখেন কম। চলেন লাঠিতে ভর করে।
ফুলেছার দুই সন্তান। বড় মেয়ে মমেনা বেগমের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সংসার টেকেনি।
মমেনা এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করে মায়ের দেখভাল করেন। ফুলেছার ছোট সন্তান সুমন মিয়া কাজের সন্ধানে ঢাকা গিয়ে আর ফেরেননি। তাই মেয়েই ফুলেছার একমাত্র ভরসা।
এমন বাস্তবতায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতার জন্য একাধিকবার সংশ্লিষ্টদের কাছে গিয়েছেন দাবি করে ফুলেছা বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত কোনো কার্ড পাননি।
তিনি বলেন, ‘আমারে এডা টেহার কাট (বয়স্ক বা বিধবা ভাতার কার্ড), আরেডা চাইলের কাট (রেশন কার্ড) কইরা দিবা বাপু। অসুখে মেলা কষ্ট অয় আমার।’
মেয়ে মমেনা বেগম বলেন, ‘আর কবে সরকারি সুবিধা পাব আম্মায়? বয়স তো কম অয় নাই। তার কাছে ভোটার কার্ড করার লোকজনও আই নাই।
‘কাউন্সিলর, মহিলা কাউন্সিলরদের ওনু (কাছে) মেলা বার গেছি। তারা খালি বলে দেখব। এইডা কইয়ায় কাজ শেষ তাদের।’
স্থানীয় বাসিন্দা ফজল মিয়া বলেন, ‘আমরা মহিলাডারে ছোট বেলা থেকে দেখতাছি। তিনি অনেক কষ্ট করে চলেন।
‘তার থাকার মতো ঘরও নাই। বৃষ্টি আইলে ঘরে পানি পড়ে। তার সরকারি কোনো কার্ডও হয় নাই এখনও।’
স্থানীয় সংগঠক আরিফুর রহমান আকিব বলেন, ‘ফুলেছা বানু মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। রহস্যজনক কারণে তিনি সরকারি ত্রাণ বা ভাতার আওতায় আসেননি।’
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাবুল মিয়া বলেন, ‘আমি নির্বাচিত হলেও জুন মাসে দায়িত্ব নেব। তখন ফুলেছা বানুর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
‘আগের কাউন্সিলর এলাকার কাজ করেননি। তাই বৃদ্ধা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।’
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফিরোজ আল মামুন বলেন, শতভাগ ভাতার আওতায় শেরপুর জেলা। তারপরও যারা সরকারি ভাতা থেকে বাদ পড়েছেন, তারা আবেদন করলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।