বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত: মেলেনি সরকারি সহযোগিতা

  •    
  • ১০ মে, ২০২১ ২১:৫৭

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ মার্চের ঝড়ে হবিগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯০০ পরিবার। সহায়-সম্বল হারিয়ে রাস্তায় বসেছে ১০৭টি পরিবার।

গত ৩০ মার্চ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামের আব্দুর নূরের ঘর। ছোট একটি দোচালা ঘরে স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে থাকতেন তিনি। ঝড়ে ঘরটি ভেঙে পড়ায় আশ্রয় নেন গ্রামের আরেক বাসিন্দা মিনজারুর রহমানের বাড়িতে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে পরিবারসহ সেখানেই আছেন তিনি। টাকার অভাবে নতুন ঘর নির্মাণ তো পরের কথা, ভাঙা ঘরটি মেরামতও করতে পারছেন না তিনি।

শুধু আব্দুর নূর নন, বহুলা গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবারের একই অবস্থা। ঝড়ে ভেঙে পড়া ঘর মেরামত না করতে পেরে অন্যের বাড়িতেই থাকছেন এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। তাদের দাবি, সরকার থেকে এখনও তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি।

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ মার্চের ঝড়ে হবিগঞ্জ জেলায় ১ হাজার ৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯০০ পরিবার। সহায়-সম্বল হারিয়ে রাস্তায় বসেছে ১০৭টি পরিবার।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ৫৫০টি, নবীগঞ্জ উপজেলার ৩২৭টি ও বানিয়াচং উপজেলার ৪০টি পরিবার রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, ঝড়ের পরদিন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের লোকজন এবং জনপ্রতিনিধিরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় তাদেরকে তালিকা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হয়। এ সময় প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরও সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হলেও এরপর আর তাদের খোঁজ নেননি কেউ।

রোববার ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায়, এখনও অনেক বাড়িঘর ভেঙে পড়ে আছে। কেউ কেউ ভেঙে যাওয়া ঘর মেরামত করছেন।

ছোট বহুলা গ্রামের এখলাছুর রহমান বলেন, ‘আমাগো এখনও কেউ আইসা দেখে নাই। ঝড়ে আমার ঘর উড়াইয়া নেওনের পর থাকিয়া অন্যের বাড়িত আছি। টাকার অভাবে এখন তমাক আমি ঘর বানাইতে পারতেছি না।’

একই গ্রামের মোহাম্মদ আশিকুর রহমান বলেন, ‘আমার ঘর ঝড়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এক মাস হইয়া গেছে, এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাই নাই। এমপি সাহেব, উপজেলা চেয়ারম্যান আইসা দেইখা গেছেন। চেয়ারম্যান কয়েকজনরে ১ হাজার টাকা ও এক বান্ডিল টিন দিয়ে গেছে। তয় আমরা কিছুই পাই নাই।’

ষাটোর্ধ্ব ছলিমা খাতুন কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘তুফানে আমগো সব নিছেগা। ঘর বানাইত পারত না দেইখা আমার পুলা আর পুলার বউ বাড়িঘর ছাইড়া ঢাকা গেছেগা। আমি মাইনষের বাড়ি বাড়ি থাকি। সরকারে দুগা চাউল দিছিল। আর কিছু দিছে না।’

নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া গ্রামের মর্জিনা বেগম বলেন, ‘এক মাস হইয়া গেছে, সরকারে অহনও আমরারে কোনো আনুদান দিছে না। টাকা না থাকায় ঘর বানাইতা পাররাম না।’

একই গ্রামের পিয়ারা খাতুন বলেন, ‘লকডাউনে কামকাজ নাই। কইতাকি খাইতাম চিন্তা কইরা পাই না। আবার ঘর বানাইতাম কিতাদি? উঙ্কা (এখন) ঋণ কইরা কোনো রকমে পুলা-পুরিরে খাউয়াইরাম। ঘর বানাইতাম ক্যামনে?’

ক্ষতিগ্রস্তদের কিছু না পাওয়ার অভিযোগ থাকলেও হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা।

তাদের দাবি, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৯ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া হবিগঞ্জ সদর ও নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে টিন দেয়ার জন্য। তবে টিন দেয়া হয়েছে কি না সেটির তথ্য জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে এখনও আসেনি।

ত্রাণ দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইশরাত জাহান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কে কে ত্রাণ পায়নি তাদের তালিকা পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

এ বিভাগের আরো খবর