মাসখানেক আগে কালবৈশাখীর ঝড়ে উড়ে যায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মাস্টারপাড়া গ্রামের দিনমজুর মমতাজ আলীর ঘর।
অন্যের জমিতে তিনি তুলেছিলেন ঘরটি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। স্ত্রী, কিশোরী মেয়ে ও মাদ্রাসা পড়ুয়া এক ছেলেকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকতে শুরু করেন। কখনো কখনো অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রাত যাপন করেছেন।
এ খবর প্রকাশ পায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। খবর পড়ে মমতাজের সাহায্যে এগিয়ে আসেন রংপুর জেলা পুলিশে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আশরাফুল আলম।
তার নেতৃত্বে ৫১ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি টিনশেড নতুন ঘর তুলে দেয়া হয় দিনমজুর মমতাজকে। গত শনিবার থেকে সেখানেই বসবাস করছেন মমতাজ আলী।
এএসপি আশরাফুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, বৃদ্ধ দিনমজুর মমতাজের ঘর উড়ে গেছে-এমন খবর আমি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে পাই। বিষয়টি আমার খারাপ লাগে। যাচাই করার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক ছোট ভাইকে দায়িত্ব দিই। সে জানায়, ঝড়ে মমতাজের ঘরটি উড়ে গেছে। এখন তিনি স্ত্রী-সন্তানসহ অনেক কষ্টে আছেন।
আশরাফুল আলম বলেন, এরপর আমি আমার আরেক ছোট ভাই জলঢাকা উপজেলা প্রশাসনের এনডিসিকে বিষয়টি জানাই। তিনি উপজেলা প্রশাসন থেকে ৬ হাজার হাজার টাকা ও দুই বান টিন দেন। বাকি টাকা আমি সংগ্রহ করি। এরপর ৫ মে ঘর বানানোর কাজ শুরু হয়। ৮ মে ঘরের কাজ শেষ হলে ওই ঘরে সপরিবারে ওঠেন মমতাজ । ১৬ হাতের ঘরটি ভালো মানের টিন, কংক্রিটের খুঁটি এবং ভালো কাঠ দিয়ে বানানো হয়েছে।’
সোমবার বিকেলে দেখা গেছে, নতুন ঘর পেয়ে দারুণ খুশি মমতাজ ও তার স্ত্রী আসমা বেগম। তারা এখন ঘরের মাটি কাটাসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মমতাজ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেলা দিন ধরি (প্রায় ১৫ বছর) মুই আতিয়ার রহমান মামার জমিত একনা ঘর বানায়া আচোং। পোরথম ( প্রথম) বিষ্টিত ঘর উড়ি যায়। বিবি, ( স্ত্রী) ছোলপোল (ছেলেমেয়ে) নিয়ে ঘরোত থাকা যায় না। এই জন্যে মানসের বাড়িত যায়া আচিনুং। মেলা চেষ্টা করচি, কাউয়ো হেল্প করে নাই, সাম্বাদিক ( সাংবাদিক) আসি ছবি তুলি নিচে তারপর এক স্যার ( পুলিশ) খোঁজ নিয়ে ঘরটা তুলি দিচে।’
মমতাজ আরও বলেন, ‘খুব ভালো নাকচে বেটা। আল্লাহ রহমত করছে। যাই মোক এই ঘরটা তুলি দিচে তোমরা দেকপেন আল্লাহ ওমাক ভালো করছে। ঘরটা পায়া মোর খুব উপকার হইচে। মোর একনা বেটি ঘরোত আছে। ওমার বয়স ১১ বছর বেশি হইল... আর কয়দিন পর বিয়াও দেওয়া নাগে। ঘর নাই, জাগা নাই, টাকা নাই, কেমন করি কী হইল হয়? কাই বেটিক বিয়াও করিল হয়..। এলা ঘরটা হইচে আল্লাহ ওমার ভালো করবে.....।’
মমতাজ আলীর স্ত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘খুউব খুশি হইচি বাবা, বিষ্টিত ঘর ভাঙ্গি উড়ি যাবার পর হামার কষ্ট কাই দেখে....। মানসের বাড়িত থাকি বেটি ( মেয়ে) নিয়া, খুব খারাপ নাগছে, মনটা খারাপ হয়া গেইছে। এই ঘর হামরা কোনোদিন বানবার (তৈরি) পাইনোং না হয়। এলা খুব ভালো নাগছে। আল্লাহ রহম করছে। পুলিশ স্যারেরও আল্লাহ ভালো করবে।’
নীলফামারী জেলার ভারপ্রাপ্ত ত্রাণ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খবরটি পেয়ে জেলা প্রশাসক স্যারের নির্দেশে আমরা দুই বান টিন ও ৬ হাজার টাকা দিয়ে সরকারিভাবে হেল্প করেছি। ঘরটিতে মমতাজ উঠেছেন। আমরা তার খোঁজখবর রাখছি।’