বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মার চরে জন্ম ‘পদ্মার’

  •    
  • ৯ মে, ২০২১ ২৩:১০

‘ট্রলার চালকের লগে কন্টাক্ট হইছিল জাজিরার মাঝিরঘাট নামাইয়া দিব। কিন্তু চরের মইধ্যে নামাইয়া দেয়। আমরা হাডা শুরু করি। কিছু পর ও (সুমা) ব্যথায় কষ্ট পায়। দুই ঘণ্টা হাডার পর বাড়ি পাই। ব্যথায় কান্তাছিল আমার স্ত্রী। হ্যাসে একটা বাড়িতে নিতেই ওর বাচ্চা হয়।’

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকা ছাড়েন নাহিদ। ট্রলার বরগুনা যাওয়ার পথে শরীয়তপুরের পাইনপাড়া চরে নামিয়ে দেয়া হয় তাদের। সেখানে শুরু হয় প্রসব বেদনা। প্রায় দুই ঘণ্টা হাঁটার পর চরের এক বাড়িতে ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্মদেন গৃহবধূ।

রোববার ইফতারের আগ মুহূর্তে চরের ওই বাড়ি থেকে মা ও নবজাতক শিশুকে উদ্ধার করে জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা। তারা দুইজনই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

মেয়েটির নাম রাখা হয়েছে মারিয়ম আক্তার পদ্মা। তার পড়ালেখার সব খরচ বহন করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান।

পদ্মার বাবা মো. নাহিদ জানান, তার বাড়ি বরিশালের হিজলা উপজেলা পূর্ব শ্রীপুর গ্রামে। দেড় বছর আগে তার সঙ্গে বিয়ে হয় বরগুনার আমতলী গ্রামের সুমা আক্তারের। বিয়ের পরে তারা চলে আসেন রাজধানীতে। পুরান ঢাকার লালবাগের একটি ছোট ভাড়া বাসায় ওঠেন তারা।

নাহিদ কাজ শুরু করেন একটি স্টিল কারখানায়। এর মধ্যেই তাদের সংসারে আসে নতুন অতিথি আসার খবর। চলতি মাসের ১১ তারিখ ছিল সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন।

নাহিদ বলেন, ‘আগেই বরগুনা যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হাতে টেকা-পয়সা ছিল না, ছিল না ছুটিও। টেকা পাইছি অখন বরগুনা যাইছিলাম। আমরা যখন বাসা থিকা বের হইছি তখন ঠিক ছিল। বাসা থিকা অটোতে কইরা মাওয়া আইছি।

‘দেহি ওই লাইনে ফেরি-লঞ্চ কিছুই চলে না। পরে দেহি অন্যখান দিয়া ট্রলার দিয়া মানুষ পার হইতাছে। ট্রলার চালকের লগে কন্টাক্ট হইছিল জাজিরার মাঝিরঘাট নামাইয়া দিব। কিন্তু চরের মইধ্যে নামাইয়া দেয়। আমরা হাডা শুরু করি। কিছু পর ও (সুমা) ব্যথায় কষ্ট পায়। দুই ঘণ্টা হাডার পর বাড়ি পাই। ব্যথায় কান্তাছিল আমার স্ত্রী। হ্যাসে একটা বাড়িতে নিতেই ওর বাচ্চা হয়। পরে সরকারি লোকজন হাসপাতালে নিয়া আইছে। আল্লায় একটা মাইয়া দিছে। আমি অনেক খুশি। বাড়িতে কইছি সবাই কাইকো আইবো।’

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাড়ে ৭টার দিকে প্রসূতি ও তার নবজাতকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। মায়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে মা ও নবাজাতক সুস্থ আছে। আশা করি, সোমবার সকালে ছেড়ে দেয়া যাবে।’

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান ভূইয়া বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার সাথে সাথে চর থেকে প্রসূতি মা ও শিশুকে উদ্ধারে নৌ অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছি। পদ্মা পার হওয়ার পর ঘাট থেকে অ্যাম্বুলেন্স করে আনা হয়েছে। এরপর জাজিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে উভয়ের জন্য নতুন পোশাক ও খাবার দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক ওই কন্যা শিশুটির ডাক নাম দিয়েছেন পদ্মা। আমাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন মা ও নবজাতক। মেয়েটির ভবিষ্যৎ পড়াশুনার যাবতীয় খরচ আমি বহন করতে চাই বলে ওই পরিবারকে জানিয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর