সাত মাস আগে চট্টগ্রামে চালক রিয়াদ হোসেন ও তার সহকারী মো. আলীকে তাদের কাভার্ড ভ্যানের মালামাল চুরি করতেই হত্যা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুক্রবার দুইজনসহ মোট চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার রাতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (গোয়েন্দা) পশ্চিম জোনের পরিদর্শক কামরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, নতুন গ্রেপ্তার দুজন হলেন মিরাজ হাওলাদার ও আবু সুফিয়ান সুজন। এই জোড়া খুনের ঘটনায় গত বছরের অক্টোবরে ফরহাদ ও বাবু নামের দুই জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে প্রাথমিক তদন্তে ফরহাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর হালিশহর থানাধীন বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে রিয়াদ হোসেন এবং মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় এলাকা থেকে মো. আলীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন নিহত রিয়াদের মা হালিশহর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনকে। ঘটনার সাত মাস পর শনিবার দিবাগত রাতে মিরাজ হাওলাদার ও আবু সুফিয়ান সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘খুনি ও নিহতরা পরস্পরের পরিচিত৷ খুনিরাও গাড়ি চালাতেন। পুলিশ নিহত মো. আলীর মোবাইল ফোন খুঁজতে গিয়ে বাবু নামের একজনের সন্ধান পায়। বাবু মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছিলেন। অক্টোবরেই বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বাবুর ফোন থেকে মিরাজ নামের একজনের সঙ্গে কথা বলার প্রমাণ পাওয়া যায়। মূলত তখনই মিরাজের প্রতি সন্দেহ হয় পুলিশের। এরপর শুক্রবার দুপুরে নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে মিরাজকে এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতে কর্ণেলহাট এলাকা থেকে সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
তিনি আরও জানান, ‘গ্রেপ্তার আসামিরা খুনের কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া মিরাজ, সুজন এবং পূর্বে গ্রেপ্তার হওয়া বাবু বন্দরের ট্রাকে বদলি চালক হিসেবে কাজ করতেন। তারা পরিকল্পনা করেন, কোন পরিচিত চালক মালামাল নিয়ে ঢাকা যাওয়ার সময় ছিনতাই করবেন। পরিকল্পনা মতো চট্টগ্রামের নিউমার্কেট থেকে দুটি ছুরিও কেনেন সুজন ও বাবু। ২ অক্টোবর রিয়াদ ও আলী বন্দর থেকে মেশিনারিজ নিয়ে ঢাকায় যাবেন বলে নিশ্চিত হন আসামিরা।
ওই দিন সন্ধ্যার পর নিহত কাভার্ড ভ্যান চালক রিয়াদ হোসেন গাড়ি নিয়ে বের হলে আসামী মিরাজ অপর আসামীসহ ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে সিটি গেইট থেকে সন্ধ্যা ৭টার সময় কভার্ড ভ্যানে উঠেন। পথে চালক রিয়াদ হোসেন এবং সহকারী আলীকে গলা কেটে হত্যা করেন তারা। হত্যার পর বিএসআরএম লোহার রডের ডিপো থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আবার চট্টগ্রামের দিকে রওনা হন। জোরারগঞ্জ থানা এলাকায় ওমেগা গ্যাস কোম্পানির পাশে হেলপারকে রাস্তার পাশে ডোবায় ফেলে দেন। কভার্ড ভ্যানের ভিতরে ড্রাইভার মিরাজের মুখ থেতলে দিয়ে বায়োজিদ লিংক রোডে মৃতদেহ ফেলার চেষ্টা করে। লিংক রোডে গাড়ির চাপ থাকায় কাভার্ড ভ্যানটি ঘুরে পতেঙ্গা নতুন নির্মাণাধীন আউটার লিংক রোডের হালিশহর এলাকায় রাস্তার ধারে ড্রাইভারের মৃতদেহ পানিতে ফেলে দেন। গাড়ির তেল শেষ হওয়ায় এবং গাড়ির কেবিনে রক্ত থাকায় মালামালসহ কভার্ডভ্যান বড়পুল মনসুর মার্কেটে ফেলে যান আসামিরা।’
পরিদর্শক কামরুজ্জামান জানান, ‘৪ অক্টোবর নিখোঁজ হন চালক রিয়াদ ও সহকারী আলী৷ ৩ অক্টোবর সকালে নগরীর বন্দর থানাধীন বড়পোল এলাকা থেকে চট্টমেট্রো-ট-১১-৮৮১২ কাভার্ড ভ্যানটি পরিত্যক্ত ও ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ৪ অক্টোবর নিহত রিয়াদ ও মো. আলীর মরদেহ উদ্ধার হয়।’
গ্রেপ্তার আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তি দেয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।