বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহাসড়ক নয় এ যেন ‘চাতাল’

  •    
  • ৭ মে, ২০২১ ২২:৫৯

তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আনিস বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনসাধারণকে সচেতন করেও তেমন কোন ফল মিলছে না। দুর্ঘটনা এড়াতে জেল জরিমানা ছাড়া বিকল্প নেই।’ প্রতিনিয়তই মহাসড়কে টহল দিয়ে জনগণকে সচেতনের বিষয়টি অব্যাহত রাখা হচ্ছে বলে জানালেন ভজনপুর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম রব্বানী।

ধান, গম, তিল, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল কেটে এনে স্তুপ করা, মাড়াই শেষে খড় শুকানোর কাজ হতো কৃষকের বাড়ির উঠোনে। কিন্তু এখন এসব কাজ হচ্ছে পঞ্চগড়ের ব্যস্ততম মহাসড়কের ওপর।

পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কটিকে মহাসড়ক না বলে এখন কৃষকের ‘চাতাল’ বলা যায়। এশিয়ান হাইওয়ে নামে পরিচিত এই মহাসড়কেই শুধু নয় পঞ্চগড়ের গ্রামগঞ্জের পাকা রাস্তাগুলোর দুই পাশ দখল করে হাজারো কৃষক এখন ব্যস্ত ফসল মাড়াই আর শুকানোর কাজে। ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে যানচলাচল হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা।

প্রতি বছর বিভিন্ন ফসলের মৌসুমে মহাসড়কের পাশের বসতবাড়ির লোকজন যে যার মতো সড়কের অপব্যবহার করছে। ক্ষেত থেকে ধান কেটে এনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে সড়কের ওপর। পরে সড়কের একটা জায়গা দখলে নিয়ে মাড়াই কল বসিয়ে দেদারসে চলছে মাড়াইয়ের কাজ।

আর এ অবস্থায় সড়কের অর্ধেক অংশে ধান শুকানো ছাড়াও খড় সড়কের ওপরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রোদে শুকানো হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরা বসতবাড়ির উঠান ছেড়ে সড়কে এসে এ কাজটি করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। এ কাজটির পাশাপাশি তারা রান্নার কাজে ব্যবহারের লাকড়ি, শুকনো মরিচ ও অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এনে ব্যবহার করছে সড়ক-মহাসড়ককে।

এসব নারী-পুরুষ সড়কে গৃহস্থালীর কাজে ব্যস্ত থাকলেও দ্রুতগতির যানবাহনের দিকে খেয়াল থাকে কম। এতে যানবাহনের চালকেরা পড়েন বিপাকে। গত কয়েক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায় এই জেলায় এসব কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। অন্যদিকে হাইওয়ে পুলিশ জানিয়েছে তারা উদ্যোগ নিলেও মানছেন না কৃষক। সচেতনতার অভাবে এসব কাজে সড়ক ব্যবহার করছেন তারা।

নিজেদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দাবি করে এই মানুষ গুলো বলছে, বাড়ীতে অনুকুল জায়গা না থাকায় বিশেষ সুবিধা নিতেই তারা এই মহাসড়ক ব্যবহার করছেন।

তেঁতুলিয়া উপজেলার খয়খট পাড়া এলাকার জহুরা বেগম বলেন, ‘বাড়ীর সামনে পাকা রাস্তায় ক্ষেতের মরিচসহ ধান, গম শুকানোর কাজ ছোট বয়স থেকেই করে আসছি, আমরা তো রাস্তার এক সাইড ব্যবহার করি তাতে তো কোন সমস্যা নেই।’

সড়কের ওপর মরিচ, ধানসহ অন্যান্য ফসল শুকানো হয়। ছবি:নিউজবাংলা

সদর উপজেলার অমরখানা এলাকার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কে এসব কাজ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বাড়তি কিছু সুবিধার জন্যে আমরা মহাসড়কে বিভিন্ন ফসল শুকানোর কাজ করে থাকি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাড়ীতে শুকনো জায়গা না থাকায় এই কাজটি করতে হয়।’

পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সদস্য মনোয়ার হোসেন দিপু বলেন, ‘মহাসড়কের দু’ধারে যে হারে সাধারণ মানুষ গৃহস্থালী কাজে সড়ক ব্যবহার করছে তাতে করে প্রতিদিন মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার।’

তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আনিস বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জনসাধারণকে সচেতন করেও তেমন কোন ফল মিলছে না। দুর্ঘটনা এড়াতে জেল জরিমানা ছাড়া বিকল্প নেই।’

প্রতিনিয়তই মহাসড়কে টহল দিয়ে জনগণকে সচেতনের বিষয়টি অব্যাহত রাখা হচ্ছে বলে জানালেন ভজনপুর হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট গোলাম রব্বানী।

আন্ত:সড়ক, মহাসড়কের সব অংশ জুড়েই বসছে মৌসুমি ফসলের মেলা। অসচেতন মানুষের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলেও দোষ হয় চালকদের, জেল জরিমানসহ আর্থিক মাসুল টানতে হয় আমাদের। অথচ যারা আইন মানছেনা তাদের বিরুদ্ধে নেই কোন ব্যবস্থা। প্রশাসন চাইলে ৭২ ঘন্টার মধ্যেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে এমনটি বললেন জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ও সাবেক সড়ক সম্পাদক মনু মিঞা।

বাংলাবান্ধা বন্দর থেকে ভজনপুর পর্যন্ত মহাসড়ক এবং আন্ত:সড়কের ওপর সব ধরনের কৃষি গৃহস্থালী কাজ বন্ধের জন্যে প্রতিটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানদের সমন্বয়ে জরুরী সভা ডেকে কঠোরভাবে বিষয়টি বন্ধের ব্যবস্থার গ্রহণে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহবুবর রহমান ডাব্লিউ ।

এ বিভাগের আরো খবর