বয়স ৬০ বা ৭০। নতুন নাম পেয়েছেন রমজানুল মোবারক। নতুন ঠিকানাও জুটেছে আশ্রয়কেন্দ্রে।
স্মৃতিশক্তিহীন এই বৃদ্ধ কিছুদিন আগেও পড়ে ছিলেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার শারীরিক শিক্ষা কলেজের সামনে রাস্তার পাশের ময়লা আবর্জনার মধ্যে। কথা বলতে পারেন না। সোজা হয়ে দাঁড়ানোরও শক্তি নেই। ঠিকানাহীন ওই বৃদ্ধকে মনিরুজ্জামান আকাশ নামে এক তরুণ রাস্তা থেকে তুলে এনে যত্ন, সেবা ও চিকিৎসা দিয়ে প্রায় সুস্থ করে তোলেন।
উদ্ধার করার সময় বৃদ্ধ। ছবি: নিউজবাংলা
বিষয়টি জানার পর বৃদ্ধের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
১৮ এপ্রিল আকাশ তাকে রাস্তা থেকে বাসায় নিয়ে আসেন। মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মনসুর বিষয়টি জেনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে বৃদ্ধের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
জানা যায়, অনেক আগেই স্ট্রোক করেন বৃদ্ধ। চিকিৎসা শেষে বৃহস্পতিবার তাকে পাঠানো হয় ত্রিশাল আশ্রয়কেন্দ্রে। সার্বক্ষণিক বৃদ্ধের খোঁজখবর নিতে বলা হয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে।
পুলিশ এই বৃদ্ধের পরিবারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
মনিরুজ্জামান আকাশ বলেন, শারীরিক শিক্ষা কলেজের সামনে দেখি এই বৃদ্ধ আধমরা অবস্থায় পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে, অনেক দিন পানি ছাড়া কোনো খাবার পাননি। শরীরে দুর্গন্ধ। অসহায় বৃদ্ধের মুখটি দেখে মায়া লেগে যায়। বাসায় নিয়ে গোসল করিয়ে খাবার দেই। নিয়মিত স্যালাইন খাইয়ে শরীরের যত্ন করা শুরু করি। তিনি ১৮ দিন আমার বাসায় পরিবারের সদস্যের মতোই ছিলেন।
চুল কাটা হচ্ছে বৃদ্ধের। ছবি: নিউজবাংলা
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আজিম সরকার বলেন, বর্তমানে ওই বৃদ্ধকে ত্রিশাল আশ্রয়ন কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত এখানেই থাকবেন।
মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আকন্দ বলেন, বৃদ্ধের পরিবারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, অসহায় বৃদ্ধের বয়স হবে ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে। ওই তরুণ বৃদ্ধকে উদ্ধার করে স্যালাইন ও খাবার খাইয়ে কিছুটা সুস্থ করে তোলেন। আমি জানতে পেরে যুবককে বলেছি, তাকে গোসল করিয়ে পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে। পরে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
ইউএনওর সঙ্গে বৃদ্ধ। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, পরিচয়ের স্বার্থে তার আসল নাম উদ্ধার করার আগ পর্যন্ত নাম দিয়েছি রমজানুল মোবারক। তার পরিবারকে খুঁজে বের করার আগ পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রেই থাকবেন তিনি।