ঈদ উপলক্ষে ‘সম্মানিত আলেমদের’ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) খুলনার খালিশপুর থানা কমিটি থেকে দেয়া উপহারসামগ্রী ব্যক্তিগত উদ্যোগ ছিল বলে জানিয়েছেন সেখানকার এক নেতা। তিনি বলেন, আলেমদের সম্মান বজায় রাখতেই দলীয় ব্যানারে দেয়া হয়েছে এসব উপহার।
সিপিবির এই অভিনব উদ্যোগ সবাইকে যেমন অবাক করেছে, তেমনি বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ট্রল হচ্ছে।
এ ব্যাপারে মুখ খুললেন এ উদ্যোগের আয়োজক সিপিবির খুলনার খালিশপুর থানা কমিটির সদস্য শ্রমিকনেতা এস এম চন্দন। শুক্রবার নিউজবাংলাকে জানান, একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে এসব উপহার দিয়েছেন তিনি।
‘আমি একেবারে ব্যক্তিগতভাবে এ উপহার দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আরও কয়েকজন সহায়তা করেছেন। তবে তারা নাম প্রকাশে আগ্রহী নন। যাদের উপহার দেয়া হয়েছে তারা দরিদ্র হলেও সহায়তাপ্রার্থী নন। তাদের সম্মান বজায় রেখে সহায়তা করার জন্যই দলের পরিচয় দিয়ে ঈদ উপহার দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী, আমি আমার দলের পরিচয়টাই দিয়েছি। আমি আমার খালিশপুর থানার সভাপতি মিজানুর রহমান স্বপনের অনুমতি নিয়ে উপহার দিয়েছি। তবে এটা দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল না।’
৫ মে বিকালে খালিশপুর পওয়ার হাউজ গেট এলাকা থেকে উপহারসামগ্রী তাদের দেয়া হয়। উপহারের মধ্যে আছে লাচ্ছা সেমাই, চিনি, পোলাওয়ের চাল, দুধ ও নগদ টাকা।
উপহার পেয়েছেন খুলনার খালিশপুরের পাঁচ আলেমসহ ১০জন। যার মধ্যে রয়েছে, ছিন্নমূল হকার ও রিক্সাচালক।
এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হাওলাদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আপনি চন্দনের সঙ্গে কথা বলেন।
বিষয়টি নিয়ে সিপিবি সদস্য এস এম চন্দন বলেন, যাদের উপহার দেয়া হয়েছে তারা সবাই আগে জুট মিলের শ্রমিক ছিলেন। এখন আরবি পড়িয়ে, মসজিদ পরিষ্কার করে দিন পার করেন। তারা মানুষের কাছে হাত পাততে বিব্রতবোধ করেন।
‘এদের মধ্যে একজন খলিশপুর আবাসিক এলাকার মতি মসজিদের খাদেম। বাজারে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারি, পাট কলের বদলি শ্রমিক ছিলেন। এখন চাকরি নেই। আরবি পড়িয়ে, মসজিদ পরিষ্কার করে চলেন। খুব আর্থিক সংকটে আছেন। ওষুধ কিনবেন। পয়সা নেই।’
‘‘সহযোগিতা করতে চাইলাম, তিনি লজ্জিত হলেন। তখন তাকে জানাই, ঈদ উপলক্ষে আমরা উপহার দেব। তিনি নিতে রাজি হলেন। তিনি আরও পাঁচজনের কথা বললেন। ‘সম্মানিত আলেমগনের জন্য ঈদ উপহার’ লিখে তাদের দলের নামে উপহারগুলো দেই।’’
‘একইভাবে ওই এলাকার কয়েকজন ছিন্নমূল হকার, রিক্সাচালককেও কিছু সহযোগিতা দিয়েছি।’
ছবিটি চন্দন নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বলে জানান। তবে এ নিয়ে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা বিতর্ক তৈরি হবে, সেটি তার ধারণায় ছিল না। বলেছেন, নিতান্ত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই সহায়তা করা হয়েছে। সেখানে রাজনৈতিক কোনো চিন্তাভাবনা বা উদ্দেশ্য ছিল না।
ফেসবুকে সরেস আলোচনা
ধর্মীয় নেতাদের সিপিবির এমন ঈদ উপহার দেয়া নিয়ে ফেসবুকে কয়েক দিন ধরেই নানা প্রতিক্রিয়া চলছে।
সাংবাদিক ইশতিয়াক রেজা সেই উপহারসামগ্রীর একটি ছবি পোস্ট করে নিজের ফেসবুক ওয়ালে লেখেন, ‘আজ ছিল কার্ল মার্ক্স-এর জন্মদিন।’
সেই পোস্টের নিচে একজনের কমেন্টের জবাবে তিনি আরও লেখেন, ‘সিপিবি তার আসল কমরেডদের চিনতে পেরেছে হয়ত।’
উপহারসামগ্রীর সেই ছবিসহ হাস্যরস করে একটি পোস্ট দিয়েছেন শ্রাবণ প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী রবিন আহসান।
তিনি লেখেন, ‘আমাদের কপালে কী আছে?’। এরপরই দুটি হাসির ইমো জুড়ে দিয়েছেন সেই ছবির ক্যাপশনে।