ইটভাটা মালিককে প্রাণনাশের হুমকি ও ১৪ লাখ ইট লুটের অভিযোগ উঠেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম মজুমদারের বিরুদ্ধে।
তিনি বৈরাগপুরের নিউ পরফুল ব্রিকস থেকে এই ইট লুট করেছেন বলে অভিযোগ ভাটা মালিক মাহমুদুল হাছানের। তবে শামীম দাবি করেছেন, তিন লাখ ইট কিনতে তিনি সাত লাখ টাকা আগাম দিয়েছেন। সব ইট বুঝে পাননি।
স্থানীয়ভাবে ‘হুজুর’ হিসেবে পরিচিত ইটভাটা মালিক হাফেজ মাহমুদুল হাছান দীর্ঘদিন ধরে ইটের ব্যবসা করেন। সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে ইটের ভাটায় যাননি। সে সময়ে ম্যানেজারের মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতা শামীম ইট লুট করেন বলে অভিযোগ হাছানের।
সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল হাছান বলেন, ‘ইট কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন ছাত্রলীগের শামীম মজুমদার। এরপর তিনি দফায় দফায় ইটভাটায় হানা দিয়ে রসিদ ছাড়াই ইট নিতে থাকেন। চুক্তিবদ্ধ তিন লাখের বেশি ইট নেয়ার পর তাকে মানা করা হয়। এখনও ইট নেয়া শেষ হয়নি, এমন কথা জিজ্ঞেস করতেই প্রকাশ্যে পিস্তল উঁচিয়ে হত্যার হুমকি দেন শামীম।’
হাছান মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ফুলগাজীর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলিম তাকে ডেকে নিয়ে নিষেধ করেন অন্য কাউকে ইট দিতে। অব্যাহত হুমকি ও প্রশাসনের সহযোগিতা না পেয়ে তিনি ২৩ মার্চ আত্মগোপনে চলে যান। এরপর অসুস্থ হয়ে পড়ায় ইটভাটায় যাননি।
এ দিকে হাছানের অনুপস্থিতিতে অন্য ক্রেতারা বসে ইট সরবরাহের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেন। সেখানকার চুক্তিপত্রে ছাত্রলীগ নেতা শামীমও স্বাক্ষর করেন। পরে চুক্তিপত্র না মেনে শামীম ইটভাটার ম্যানেজার সপ্তম সাহার সঙ্গে আঁতাত করে এক মাস ধরে ১৪ লাখ ইট লুট করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন হাছান মাহমুদ।
ইট লুটে বাধা দিতে গেল তার স্ত্রীকেও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। আর্থিক সংকটে বর্তমানে ইটভাটার প্রায় অর্ধশত শ্রমিকের বেতন বকেয়া রয়েছে। অন্যদিকে ইটের ক্রেতারাও পড়েছেন বিপাকে। কেউ বাড়ি তৈরি, কেউ রাস্তা নির্মাণের জন্য ইট কিনতে আগাম টাকা দিয়েছেন। তারা এখন নিউ পরফুল ব্রিকফিল্ডে ইটের জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু শামীম সব ইট নিয়ে যাওয়ায় এখন কেউই পাওনা ইট পাচ্ছেন না।
ইটভাটার মালিক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শামীমের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট ব্রিকফিল্ড মালিকরা। গত বছর একই কায়দায় পাশের এস আলম ব্রিকফিল্ডের ইট লুট করে নেন শামীম। তখন পুলিশ ইটবোঝাই চারটি ট্রাক আটক করেছিল। পরে রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা হয়।’
ইট লুটের অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা শামীম মজুমদার বলেন, ‘আমি তিন লাখ ইটের জন্য কয়েকটি কিস্তিতে সাত লাখ টাকা দিয়েছি। এর মধ্যে কিছু ইট নিয়েছি। কিন্তু এখনও বেশির ভাগ ইট পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে মালিক পালিয়েছেন। তাই ইট অথবা টাকা কীভাবে পাব তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার বলেন, ‘আমিও ইটের জন্য বেশ কিছু টাকা অগ্রিম দিয়েছি। তবে শামীমের কোনো কাজের সাথে আমি জড়িত না।’