রাশেদুলের এখন দিন শুরু হয় নিজের বাগানের শাকসবজির পরিচর্যায়। সবজি তুলে ভ্যান বোঝাই করে নিয়ে যান বাজারে। পাইকারি বা খুচরা দরে বিক্রি শেষে তারপর ফেরেন বাড়িতে।
রাশেদুল ইসলাম মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ঢাকার ধামরাইয়ে গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কাওয়াখোলা গ্রামে।
রাশেদুলের বাগানের শসা
করোনাভাইরাস মহামারিতে বন্ধ রয়েছে কলেজ। এই সময়টা অলসভাবে না কাটিয়ে অসুস্থ কৃষক বাবার পরামর্শে নিজেদের ৭০ শতাংশ জমিতে তিনি শুরু করেন সবজি চাষ।
পাঁচ মাস ধরে সবজি চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন রাশেদুল। পরিবারের সবজির চাহিদা যেমন মিটছে তেমনি আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি।
রাশেদুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার আব্বা মনে করেন যে, অনেক আগে থাইকাই (থেকেই) কৃষিকাজ করে। পরে দেখি যে আব্বা একটু অসুস্থ। করোনার পরে কলেজও বন্ধ। পরে ভাবলাম আর কী করব? বেকার না থাইকা আব্বার সঙ্গে একটু কৃষিকাজ করি। যা কিছু করার আব্বার সঙ্গে পরামর্শ কইরাই করি।
‘আমি তো অনেক আগে থাইকাই আব্বার পাশাপাশি একটু সাহায্য করি। কিন্তু এবার একটু বেশি সময় দিয়া পুরাদমে নিজেই করছি। আমার আব্বার কাছ থাইকা হেল্প নিছি কীভাবে কী করতে হয়। আমার আম্মা আছে আর একটা বোন আছে। তবে বোন শ্বশুরবাড়ি থাইকা আসলে সেও হেল্প করে।’
নিজেদের জমিতে গড়ে তোলা সবজি বাগান
ছেলের এমন কাজকর্মে সন্তুষ্ট ষাটোর্ধ্ব আব্দুল মালেক।
তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের জইন্যে পোলার কলেজ বন্ধ অনেক দিন হইয়া গেছে। আগে নিজে একাই ক্ষ্যাত-খামার করছি। অনেক দিন ধইরা আমার শরীলডাও বেশি একটা ভালো না। অ্যারপর থাইকা পোলাডাই কামকাজে সাহায্য করত।
‘পরে উই একলাই পুরা ক্ষ্যাত করছে। ধুন্দল, করলা, বেগুন, মরিচ বুনছে। ভালো দামে হেইগুলা আবার বেচছেও। এলাকার অন্য পোলাপানের মতো বাইরে ঘোরাফেরা না কইরা উ সংসার সামলাইছে। এইডাই আমার জন্য অনেক।’
কোন কোন সবজি চাষ করেছেন
রাশেদুল বলেন, ‘অ্যার আগে আমাগো ৭০ শতাংশ জমিতে ফুলকপি আর পাতাকপি চাষ করছিলাম। ২০ শতাংশ জমিতে পাতাকপি আর বাকিটুক লাগাইছিলাম ফুলকপি। কিন্তু ২০-২৫ হাজার ট্যাকা লস হইছিল। জানুয়ারি মাস থাইকা পাতাকপির পরে আমি ধুন্দল, করোলা, শসা, বরবটি, মরিচ এ্যাগলা চাষ করতাছি।
‘ধুন্দল বুনছি ২১ শতাংশ, করোলা ১৬ শতাংশ, শসা ১৬ শতাংশ আর বরবটি আছে ১৫ শতাংশ জমিতে। জমির চারপাশ দিয়া মরিচ, ঢ্যাঁড়শ আর বেগুনগাছও বুনছি। ৪৫ হাজার ট্যাকার মতো আমাদের এখানে ইনভেস্ট করতে হইছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ১ লাখ ট্যাকার ওপর আল্লাহর রহমত বেচা হয়ে গ্যাছে। গেছে রমজানেও সবজির দাম কম আছিল। কিন্তু এই রমজানে দাম বেশি পাইতাছি। এখন ৫ টাকার ধুন্দল ২০-৩০ টাকা পাইতাছি। আর শসা, করলাটাতে ভালো দাম পাইলাম। করলা ৪০-৫০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, বেগুন ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৩০-৪০ টাকায় বেচতাছি।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হাসান বলেন, ‘এটা তো খুব ইন্সপায়ারিং একটা কাজ। একদিকে সে তার পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে, পাশাপাশি তার পরিবারে সচ্ছলতাও এনেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষিত ছেলেরা যদি কৃষিতে আসে তাহলে তো কৃষি আধুনিক হবে। নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জাত সহজেই তারা নিতে পারবে। আর নতুন প্রযুক্তি ও জাত কিন্তু মান্ধাতা আমলের কৃষকরা নিতে চায় না। মূলত তারা ঝুঁকি নিতে চায় না।’