বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঘুরছে না লঞ্চের পাখা, চলছে না সংসারের চাকা

  •    
  • ৫ মে, ২০২১ ১৬:০২

‘গত ২০ দিন ধইরা লকডাউনের কারণে ঘাটে লচ চলাচল বন্ধ অইয়া গেছে। এর লগে বন্ধ অইয়া গেছে আমাগো কাজকামও। লচের পাখাগুলা বন্দের লগে আমগো সংসারের চাকা গুলাও বন্দ অইয়া গেছে। কবে যে লচ চলাচল শুরু হইবো আল্লাহই ভালা জানেন।’

মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সকল নৌরুটে বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। কর্ম হারিয়ে বিপাকে পড়েছে চাঁদপুর শহরের লঞ্চঘাট শ্রমিক ও নৌযান-কর্মীরা।

এই দুঃসময়ে কোনো সহায়তা না পেয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছে শ্রমিকরা। অচিরেই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

চাঁদপুর লঞ্চঘাটের শ্রমিক সর্দার আব্দুর রশিদ। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই বৃদ্ধ দীর্ঘ ৩৫ বছর কুলির কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। কিন্তু লকডাউনে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমার ৫৫ বৎছর জীবনে ৩৫ বৎছর ধইরা লচঘাটে কুলির কাম কইরা আইতেছি। এই দীর্ঘ কর্মজীবনে অনেক খারাপ সময় পার অইছে। অনেক সময় হরতাল বা প্রকৃতিক কারণে লচ চলাচল বন্দ থাকত। কিন্তু অহনকার মতন এমন কটিন সময় আর কহনই আহে নাই আমার জীবনে।

‘গত ২০ দিন ধইরা লকডাউনের কারণে ঘাটে লচ চলাচল বন্ধ অইয়া গেছে। এর লগে বন্ধ অইয়া গেছে আমাগো কাজকামও। লচের পাখাগুলা বন্দের লগে আমগো সংসারের চাকা গুলাও বন্দ অইয়া গেছে। কবে যে লচ চলাচল শুরু হইবো আল্লাহই ভালা জানেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমগো এই ঘোর দুঃসময়ে সহায়তার আত বাড়ায়া দিতে আউয়াগ্গায়া আহে নাই কেউ। সামনের দিনগুন কেমনে কাটবো হেই লইয়া চিন্তার সীমা নাই। আমরা সরকারের কাচে সাহাইজ্য সহায়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মাইনা দ্রুত লচ চলাচলে দাবি জানাই।’

লঞ্চঘাট শ্রমিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘বর্তমানে দেশো যানবাহন, কলকারখানা, দোকান, ব্যবসায় বাণিজ্য সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলতাছে। কিন্তু করোনার কথা কইয়া লঞ্চ চলাচল বন্দ কইরা রাকছে। এতে কইরা আমরা হাজারো মানুষ কর্মহীন অইয়া মানবেতর জীবন কাটাইতেছি।

‘কিন্তু আমাগো খবর কেউ রাহে নাই। কেউ আমাগোরে একটুখানি সাহাইয্যের আত বাড়ায়া দেয় নাই। সামনে যে ঈদ আইতেছে, আমাগো বউ পোলাপাইনের জন্য কিছু তো কিনা দূরের কতা, একটু সেমাই কিনার সামর্থ্যও নাই।'

এমভি ঈগল-৭ লঞ্চের স্টাফ মো. সওকত বলেন, ‘লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাহনে আমরা যারা স্টাফ আছি, হেরা অনেক বিপদে আছি। আমাদের আয়ের পথ বন্ধ অইয়া যাওনে সংসারের খরচ মিলাইতে পারি না।

‘আমরা স্বাস্থ্যবিধি মাইনা সরকারের সকল নির্দেশনা মাইনা লঞ্চ চলানোর দাবি জানাই। এমনে আমরা কর্মহীন থাকলে আমাগো পরিবারগুলা পথে বইবো।’

দেশে লকডাউনের কারণে গত ১৪ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ। এতে করে চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১২টি রুটে চলাচল করা প্রায় অর্ধশত লঞ্চ বিভিন্ন ঘাটে নোঙর করা আছে।

চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএ-এর বন্দর কর্মকর্তা কাউসারুল আলম বলেন, ‘গত বছর দেশে করোনার সময়ে চাঁদপুরের লঞ্চঘাট শ্রমিকদের সহায়তা করা হয়েছিল। এ বছর এখনো পর্যন্ত কোনো সহায়তা করা হয়নি।

‘তবে আশা করি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে লঞ্চঘাট শ্রমিকদের সহায়তা করা হবে। তাছাড়া যারা লঞ্চের কর্মী রয়েছেন, তাদের কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে সহায়তা করার কথা রয়েছে।’

পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়। তারা যখন লঞ্চ চলাচলের জন্য উপযুক্ত সময় মনে করবেন, তখন থেকে আবার চাঁদপুরসহ সারা দেশে লঞ্চ চলাচল শুরু করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর