বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০ হাজার মানুষকে বিনা মূল্যে ইফতারি

  •    
  • ৫ মে, ২০২১ ০১:১২

কাজী আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিন মাত্র ৫০ প্যাকেট ইফতারি দিয়েছিলাম । কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় পরের দিন থেকে প্যাকেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিই। সাত দিন ধরে ৫০০ প্যাকেট ইফতারি দিচ্ছি।’

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিন থেকে তিনি দিনমজুরদের জন্য রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিনা পয়সায় ইফতারসামগ্রী রাখছেন। শুধু তা-ই নয়, কখনও রাস্তায় হেঁটে হেঁটে রিকশাচালকদের মধ্যে,আবার কখনও গরিব অসহায় মানুষের ঘরে গিয়ে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী ও আর্থিক সহায়তা। গত ২১ দিনে তিনি প্রায় ১০ হাজার রোজাদার মানুষকে ইফতারি খাইয়েছেন।

এই তিনি হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর হোসেন ওরফে কাজী চাচা। তার এই মহতী উদ্যোগ পটুয়াখালী শহরের মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

যেভাবে শুরু

রোজা শুরুর আগে টাউন বহাল গাছিয়া এলাকার আবদুল হাশেম মিয়া নামের ৬০ বছরের এক বৃদ্ধ প্রথম রোজায় কাজী আলমগীর হোসেনের বাসায় ইফতার করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। মূলত ওই দিন থেকেই কাজী আলমগীর সিদ্বান্ত নেন, গোটা রমজান মাস হাশেম মিয়ার মতো গরিব অসহায় রোজাদারদের বিনা পয়সায় ইফতার করাবেন। যেই ভাবা সেই কাজ। ওই দিন থেকেই শুরু হয় তার এই মহতী কার্যক্রম।

প্রথম রোজার দিন শহরের প্রবেশদ্বার চৌরাস্তা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের গোলচত্বরে সাজিয়ে রাখেন ইফতারসামগ্রী। বিকেল ৫টা থেকে রিকশাচালকসহ গরিব অসহায় মানুষরা যে যার মতো করে ইফতারসামগ্রী সংগ্রহ করেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত তিনি অসহায় মানুষদের দিয়ে যাচ্ছেন বিনা মূল্যে ইফতারি ।

কাজী আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম দিন মাত্র ৫০ প্যাকেট ইফতারি দিয়েছিলাম । কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ায় পরের দিন থেকে প্যাকেটের সংখ্যা বাড়িয়ে দিই। ১০০, ২০০, ৩০০ এভাবে প্যাকেটের সংখ্যা বাড়াই। সাত দিন ধরে ৫০০ প্যাকেট ইফতারি দিচ্ছি।

‘শুধু ইফতারসামগ্রী বিতরণ করেই ক্ষান্ত হই নাই, অসহায় নারীদের সেলাই মেশিন, শাড়ি ও লুঙ্গিসহ ঈদের সামগ্রীও ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘কাউকে জানানোর জন্য কিংবা প্রচারের জন্য নয়, সম্পূর্ণ বিবেকের তাড়নায় এবং আল্লাহকে খুশি করার জন্য এ কাজ করছি। জনপ্রতিনিধি না হয়েও সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যে তৃপ্তি পাওয়া যায়, সেটা এই কাজ না করলে বুঝতে পারতাম না।’

কাজী আলমগীর হোসেন জানান, শহরের চৌরাস্তায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের গোলচত্বরে, সার্কিট হাউজ সড়ক, সোনালী ব্যাংক মোড়, নিউমার্কেট চত্বর, প্রেস ক্লাবের সামনে, লঞ্চঘাটে, ২ নং বাধঘাট, বনানী মোড়, সবুজবাগ ৬ষ্ঠ লেন, চৌরাস্তা ব্রিজ, বৃদ্ধাশ্রম, গরুর বাধঘাট, সিঙ্গারা পয়েন্ট ও জুবিলী স্কুল মোড়ে ইফতারসামগ্রী রাখা হচ্ছে।

খুশি খেটে খাওয়া মানুষরা

শহরের একটি নির্মাণাধীন ভবনে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের শারিকখালী গ্রামের আনিসুর রহমান ও হাসেম মৃধা। ১৫ দিন ধরে তারা বিকেল পাঁচটার পরপরই ছুটে যাচ্ছেন কাজী চাচার ইফতারসামগ্রী বিতরণের স্থানে। নিয়ে যাচ্ছেন দুটি করে ইফতারসামগ্রীর প্যাকেট।

আনিসুর রহমান বলেন, ‘লকডাউনে হোডেল বন্ধ, হ্যারপর বাড়ি যাইতে যাইতে রোজা খোলার সময় থাহে না। হেই জন্য চাচার ফ্রি এফতাইরদা রোজা খুলি। ভাল্লাগতাছে। চাচার জন্য দোয়া হরি। চাচায় হাজী মানুষ আল্লাহ তারে ভালো রাহুক।’

রিকশাচালক বারেক মিয়া বলেন, ‘লকডাউনে শহরে প্যাছেঞ্জার নাই বললেই চলে। যা দুই-একজন আছে ভালোমতোন টাহাও দেয় না। ছোডোকাল অইতে রোজা থাহার অব্যাশ। হেইজন্য হারাদিন রোজা থাইক্কা বিআলে খোঁজতে থাহি চাচায় এফতার দেয় কোনহানে। হেইহানে ছুইট্টা যাই। করোনার মধ্যে চাচার এই কামে মোরা দারুন খুশি।’

শামিল হয়েছে জেলা ছাত্রলীগও

কাজী আলমগীর হোসেনের বিনা মূল্যে ইফতারসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম দেখে জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা তাকে সহয়তায় এগিয়ে এসেছেন। হীরা, হৃদয় আশিস, আরিপ তানভীরসহ জেলা ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন নেতা প্রতিদিন চাচার ইফতার বিতরণের এই কার্যক্রমে শরিক হন।

ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হৃদয় আশিষ বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি থেকে আজ চাচা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও হাজী মানুষ। আমরা ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে আমি তার জন্য গর্ববোধ করছি। চাচার এই মহতী উদ্যোগে তার পাশে থেকে কিছু সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এই শহরে কাজী চাচা একজনই।’

ছাত্রলীগ নেতা সালাহউদিন হীরা, সবুর ও আরিপ তানভীর জানান, যতদিন কাজী আলমগীর হোসেন দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতার বিতরণ করবেন, ততদিন তারা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন।

বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান

কাজী আলমগীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সমাজে বিত্তশালী যারা আছেন, তাদেরও উচিত করোনার মধ্যে গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই শহরের মাটি ও মানুষের সঙ্গে আমার হৃদয়ের সম্পর্ক। এই লকডাউনে দরিদ্র মানুষের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। ওরা দিন আনে দিন খায়। তার মধ্যে অনেকেই আবার রোজা রাখেন। বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমি এই কাজ করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর