জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আতারপাড়া সরকারি পুকুরপারের আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম ও রৌশন আরা ওশনা বিবি দম্পতির দুটি সন্তানই মানসিক রোগে আক্রান্ত। নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শিকলে বেঁধে রাখা হয় দুইজনকে।
সন্তানদের নিয়ে কোনো স্বপ্ন দেখেন না সহায়সম্বলহীন দম্পতি। বরং তারা না থাকলে কারা এই দুই সন্তানের দায়িত্ব নেবে, ভেবে হতাশায় ভোগেন তারা।
উপজেলার আতারপাড়া সরকারি পুকুরপারে আবাসন প্রকল্পের একটি বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে এই দম্পতির। রফিকুল ইসলাম পেশায় দিনমজুর আর ওশনা বিবি গ্রামের গৃহস্থ বাড়িগুলোতে ঝিয়ের কাজ করেন।
২২ বছর আগে জন্ম নেয়া মেয়ে অ্যামি আর ১৮ বছর আগে জন্ম নেয়া রুস্তম শুরুতে ছিলেন সুস্থ মানুষ। বছর সাতেক আগে আ্যামিকে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারাতে থাকেন। এ কারণে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদও হয় তার। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন রুস্তমও।
মানসিক রোগের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করানোর মতো সংগতি নেই দম্পতিটির। উপায়ান্তর না পেয়ে লোহার শিকলে বেঁধে রাখা হয় তাদের। তাবিজ-কবজ আর ঝাড়ফুঁকে বিপদ দূর করার চেষ্টা চলছে।
মা ওশনা বিবি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হামার সোয়ামীও তো আধা পাগলা, দুইটা ছলও হামার পাগলা-পাগলি। একদিন কামকাজ না করলে ভাত হয় না। যখন কাম হয় না, তখন এই পাগলা-পাগলি ছলগুলা হামার না খায়া থাকে। মানুষে এনা দেয়, তাই চায়াচিন্তে পাগলা-পাগলিক আনে এনা খিলাই। ইংকা দুঃখের-কষ্টের মধ্যে হামরা আছি, হামরাই মরে গেলে কে দেখপে বাপো।’
আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা আছে বাবা রফিকুলের। তবে আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে চিকিৎসকের কাছে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘বড় মেয়ে, পাগল, কোথায় যায়, কী করে, কে জানে।’
অ্যামির শিকলবন্দি জীবন
বাবা-মা বাড়ি ফিরলে ছেলের পায়ের শিকল অবশ্য খুলে দেয়া হয়।
এলাকাবাসী এই পরিবারটিকে কম-বেশি সহায়তা করে আসছে। তবে এখন সহায়তাও কমে আসছে। পরিবারটির চিকিৎসার উদ্যোগ নিতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও বিত্তবানদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তারা।
চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যামি ও রুস্তমকে সুস্থ করা সম্ভব বলে মনে করেন জয়পুরহাট মাতৃভূমি অটিজম অ্যাকাডেমির কর্মী তিতাস মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা সমাজে নৈতিকভাবে শৃঙ্খলিত আছি, তারা এগিয়ে এসে এই অবহেলিত মানুষদের চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের সুস্থ করে তুলে সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আনার জন্য সকলের প্রতি আবেদন রইল।’
কালাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ও জেলা সমাজসেবা অফিসে গেলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি কোনো কর্মকর্তা।
পরে জয়পুরহাট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ইমাম হাসিম মোবাইল ফোনে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যতদূর সম্ভব সাহায্য করা হবে।’
তবে চিকিৎসার ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি।