মা মারা গেছেন, তাই বাবা আবার বিয়ে করেছেন। সৎ মা আদর করার বদলে অত্যাচার করবেন-এই ভয়ে ২০১৪ সালে বাড়ি থেকে গোপনে পালিয়েছিল ছয় বছরের শিশু আবিদ হাসান হালিম।
বড় ভাই মনির হোসেন এবং বাবা আউয়াল মিয়া হন্যে হয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাকে কোথাও পাননি।
এর কিছুদিন পরই হালিমের বাবা হঠাৎ মারা যান। বড় ভাই মনির হোসেন ছোট ভাইকে খুঁজে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন। কিন্তু সাত বছর পর নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছে হালিম। এ নিয়ে বড় ভাই আর স্বজনরা আনন্দে ভাসছেন।
যে সৎ মায়ের ভয়ে হালিম পালিয়েছিল তিনি এখনও স্বামীর বাড়িতেই আছেন। ছেলে ফিরে আসায় তিনিও খুশি হয়েছেন।
জানা গেছে, এত বছর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চৌধুরীবাড়ি এলাকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে ছিল হালিম। এখন তার বয়স ১৩ বছর।
সোমবার সন্ধ্যায় হারিয়ে যাওয়া হালিমকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন তার বড় ভাই মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘রোববার বিকেলে আমার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের খোঁজ পেয়ে উপজেলার রাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে এনেছি।’
উপজেলার রাওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহাবুল আলম বলেন, ‘হঠাৎ করে হালিমের মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা আবার বিয়ে করেন। কিন্তু হালিম মনে করেছিল সৎ মা কখনও আদর করতে পারে না। আর তাই কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তাকে সব আত্মীয়স্বজনের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি।’
তিনি জানান, হারিয়ে যাওয়ার পর ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে জনৈক এক ব্যক্তি হালিমকে পান। তখন হালিম তার ঠিকানা স্পষ্ট করে বলতে পারেনি। তখন ওই অপরিচিত ব্যক্তি শিশু হালিমকে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানার চৌধুরীবাড়ি এলাকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন। এতিম শিশু হিসেবে এই আশ্রয়কেন্দ্রে ২০১৪ সাল থেকে ৭ বছর ধরে কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে আশ্রিত ছিল।
শাহাবুল আলম বলেন, ‘এত বছর পরিপূর্ণ ঠিকানা বলতে না পারলেও কয়েক দিন আগে হালিম আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের তার বাড়ি গফরগাঁও বলে জানায়।
‘এরপর আশ্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তা গফরগাঁও উপজেলার বাসিন্দা তফাজ্জল গোলন্দাজ হালিমের পরিচয় জানতে আমাকে ফোন করেন। পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এই হালিম হচ্ছে ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া সেই হালিম। পরে হালিমের বড় ভাই মনিরকে সঙ্গে নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে নিয়ে আসি।’