রাজশাহীতে কমেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এপ্রিলের শুরুতে প্রতিদিনই করোনার সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছিল তাতে ভয়ঙ্কর কিছুরই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। তখন সংক্রমণের হার প্রায় ৪০ ভাগের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তবে লকডাউন শুরুর পর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সংক্রমনের হারও কমেছে।
তবে আবারও মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে যে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে তাতে যেকোন সময় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।
রাজশাহীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত আনে মার্চ মাস থেকেই। এপ্রিলের শুরু থেকে অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে সংক্রমণ আর রোগীর সংখ্যা। চাপ বাড়তে থাকে নমুনা পরীক্ষা করানোর জন্য। এপ্রিলের শুরুতে দুই শিফটের জায়গায় চার শিফট করে পরীক্ষা চলে ল্যাবে। প্রতিদিনই প্রচুর সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়। মূলত এপ্রিলের প্রথম থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত শনাক্তের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাব সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল ১ তারিখ পরীক্ষা করা হয় ৩৭৬টি নমুনা। এর মধ্যে ৬৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ জন ছিল রাজশাহীর। ২ এপ্রিল ১৮৬টি পরীক্ষা করে ২৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সবাই রাজশাহীর। ৩ এপ্রিল ৩৭০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে রাজশাহীর ৫৬ জন। ৪ এপ্রিল ৩৭৪টি পরীক্ষা করে ১০৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে রাজশাহী জেলার ৯৯ জন। এভাবে ১৫ এপ্রিল ২৭২টি পরীক্ষা করে ৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর মধ্যে ৫৭ জনই রাজশাহীর বাসিন্দা।
এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে থাকে। ১৬ এপ্রিল ২৭৪টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে রাজশাহীর বাসিন্দা ৫১ জন। ১৭ এপ্রিল ৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে রাজশাহীর বাসিন্দা ৩৭ জন।
১৮ এপ্রিল ২৬৮টি পরীক্ষা করে ৬৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। সবার বাড়িই রাজশাহীতে। ২৬ এপ্রিল ২৭৯টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়ে ৩৮ জনের। পর দিন ১৮৫টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়ে ২৭ জনের। ২৮ এপ্রিল ২৮২টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়ে ২৮ জনের শরীরে। এর চারদিন পরে ১৬২টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়ে ২৭ জনের। এর দুইদিন পরে ২৮০টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনা ধরা পড়ে ৬০ জনের শরীরে। এর মধ্যে রাজশাহী জেলার শনাক্ত হয় ১৬ জন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি যখন ভয়ঙ্কর দিকে যাচ্ছিলো তখন মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় কাজ করছিলো। একদিকে সরকারীভাবে ঘোষিত লকডাউন অন্যদিকে নিজেরা সতর্কভাবে চলাফেরা করা। সব মিলিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা এসেছে।
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীর পথঘাটে মানুষের বেসামাল চলাচল ও বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি যেভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে তাতে পরিস্থিতি আবারও ভয়াবহ হতে পারে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইউম তালুকদার বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি দেখতো বেশ ভালোই লাগছে। করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কমেছে। এটা ভালো খবর। তবে, এতেও আমরা চিন্তামুক্ত হতে পারছিনা। কারণ আবারও কখন পরিস্থিতি খারাপের দিকে চলে যায় তা বলা মুশকিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের সচেতনতা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা, মাস্ক পরা এসবের মাধ্যমেই সংক্রমণ কমানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এই সচেতনতার ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আবারও গা ছাড়া ভাব দেখানোর সুযোগ নেই।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বলেন, ‘মানুষের সচেতনতা খুবই জরুরী। মানুষ নিজে থেকে না মানলে প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে। এর বিকল্প নেই।’
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। শহর এবং গ্রামে সবখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে।’
এদিকে, গত কয়েকদিন ধরে রাজশাহীর মার্কেটগুলো ক্রেতায় সরগরম। হুড়োহুড়ির মধ্যে চলছে কেনাকাটা। বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবনতাও দিনদিন কমছে।
রাজশাহী জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাত হাজার ৮৩৯ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৬ হাজার ৮৯৬ জন।