জাটকা রক্ষা ও ইলিশ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার।
নিষেধাজ্ঞা শেষে গত শনিবার থেকে পুরোদমে মাছ শিকারে নামেন ভোলার জেলেরা। কিন্তু দিন শেষে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছেন না তারা।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের জেলে ভুট্টু মাঝি। গত শনিবার সাত জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে মেঘনা নদীতে মাছ শিকারে যান। আশা ছিল, মাছ ধরে তা বিক্রি করে গত দুই মাসের লোকসান পুষিয়ে নেবেন। মানুষের কাছ থেকে নেয়া ধার পরিশোধ করবেন। এ আশা নিয়ে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় নদীতে জাল ফেলে মাত্র তিনটি ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফেরেন। একই অবস্থা চলছে গত তিন দিন ধরে। যা মাছ পাচ্ছেন তিনি, এতে দেনা পরিশোধ তো দূরের কথা, মাছ বিক্রি করে ট্রলারের তেলের টাকাও হবে না। ঋণের বোঝা আরও ভারী হচ্ছে।
একই অবস্থা ওই এলাকার ইলিয়াছ মাঝির। তিনি জানান, দুই মাস পর নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন, কিন্তু হতাশ হয়ে ট্রলার নিয়ে ফিরে আসেন।
ভোলারখাল এলাকার জেলে রহিম মাঝি বলেন, ‘আমরা ১০ জেলে একটা ট্রলার নিয়া প্রায় ৭-৮ হাজার টাকা খরচ কইরা নদীতে মাছ ধরতে গেছি। যা মাছ পাইছি, হেয়া ২ হাজার ৮০০ টাহায় বেচছি। এতে মোগো তেলের খরচও ওডে নাই।’
ভোলার তুলাতুলি মাছঘাটের ব্যবসায়ী মো. ইউনুছ জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ১০-২০ জন জেলেকে ৫-৭ লাখ টাকা দাদন দিয়েছেন। কিন্তু অভিযান শেষে গত তিন দিনে ১০টি ইলিশ মাছও কিনতে পারেননি তিনি। সারা দিন নদী থেকে কোনো কোনো জেলে এক-দুইটি ইলিশ নিয়ে ঘাটে আসেন। আবার কেউ আসেন খালি হাতে।
ঘাটের ১১জন আড়তদার এখন দুশ্চিন্তায়। কীভাবে তারা মানুষের দেনা পরিশোধ করবেন এটাই তাদের চিন্তা।
বর্তমানে পুরো ঘাটে দৈনিক ১০-১২টি ইলিশ কেনা-বেচা হয়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের ও এনজিওর ঋণের চাপে মাছের ব্যবসা ছেড়ে পালাতে হবে বলে দাবি আড়তদারদের।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, এ বছর মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি ও অনাবৃষ্টির কারণে ইলিশ কম। তবে বৃষ্টিপাত বাড়লে নদীতে ইলিশ বাড়বে।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এ.এফ.এন নাজমুস সালেহীন জানান, অভিযানকালীন অভয়াশ্রম থেকে বড় ইলিশ সাগরে চলে যাওয়ায় ইলিশের সংকট দেখা দিয়েছে। আগামী দুই-তিন মাস পর (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) সাগরের ইলিশগুলো ওপরের দিকে উঠে আসবে। আর তখন নদীতে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়বে।