নীলফামারীর জলঢাকায় হরিশচন্দ্র পাঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনা। সোমবার দুপুরে সংঘর্ষ হলে আহত হন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর ও ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুজন যুবককে আটক করেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, হরিশচন্দ্র পাঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজে নেই পরিচালনা পর্ষদ। সেখানে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা বন্ধ দুই মাস। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল কলেজটির পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল আলম সিয়ামকে। স্থানীয় লোকজন তাকে মেনে না নেয়ায় সোমবার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য সোমবার শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নীলফামারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জলঢাকা পৌরসভার মেয়রসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সংসদ সদস্যের মনোনীত সভাপতি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর ও জাতীয় পার্টির নেতা শফিকুল ইসলাম আহত হন। উপজেলা চেয়ারম্যানকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শফিকুল ইসলাম নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আহত শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে দুই মাস ধরে বেতনভাতা বন্ধ। এখানে বাইরের মানুষ এসে সভাপতির দায়িত্ব নেন। স্থানীয় লোকজন সুযোগ পান না। সিয়াম নামে যে ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তিনি আওয়ামী লীগ করেন না, এমনকি জাতীয় পার্টিও করেন না।
‘তার সভাপতি মনোনয়ন নিয়েই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন লোকজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাপ দিচ্ছেলেন এমপি মনোনীত ব্যক্তিকে মেনে নিতে। অন্যথায় বিলে সই করবেন না বলে তিনি জানাচ্ছিলেন। সোমবার দুপুরে এসব নিয়ে আলোচনার সময় হামলা হয়।’
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত কমিটি না থাকায় তা নিরসনের চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় সভা চলছিল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সহযোগিতা করেননি। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার উপর পরিকল্পিত হামলা হয়।’
খুটামারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ শামীম বলেন, ‘এমপির মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তিকে সভাপতি হিসেবে গ্রহণ করছেন না স্থানীয় মানুষ। প্রতিষ্ঠানটিতে স্থানীয় কেউ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করুক সেটি চান তারা।’
সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে বিধি মোতাবেক যা করণীয় তা করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধন থাকতে পারে।’
জলঢাকা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- হরিশ্চন্দ্রপাঠ সুরিপাড়া এলাকার আনিছুর রহমান ও লোকমান হোসেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন।
নীলফামারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম মুক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।’