মায়ের মৃত্যুর খবরে ঢাকা থেকে স্বামী ও শিশুসন্তান নিয়ে স্পিডবোটে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় যাচ্ছিলেন আদরি বেগম। তার পৈতৃক বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি আলফাডাঙ্গাতেই। স্বামী ঢাকায় ব্যবসা করায় সন্তানসহ তিনি ঢাকাতেই থাকতেন।
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে আদরি উঠেছিলেন স্পিডবোটে। সোমবার সকালে স্পিডবোটটি মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বাল্কহেডকে ধাক্কা দেয়। এতে উল্টে যায় বোটটি।
উদ্ধারকর্মীরা আদরিকে উদ্ধার করে তীরে আনলেও বাঁচানো যায়নি তার স্বামী আরজু মিয়া ও দেড় বছরের ছেলেকে।
দুর্ঘটনার পর একে একে উদ্ধার করা ২৬ মরদেহের মধ্য থেকে স্বামী-সন্তানকে খুঁজে পান আদরি। নিজের শরীরে আঘাত, তার ওপর স্বামী-সন্তান হারানোর শোক। সব মিলিয়ে বাকরুদ্ধ তিনি। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে যান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
বেলা ১১টার দিকে ঘাটে গিয়ে একমাত্র জীবিত যাত্রী হিসেবে তাকেই পাওয়া যায়।
স্পিডবোটে থাকা আরও পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তারা ভর্তি আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
ঘাট এলাকায় দেখা যায়, চলছে উদ্ধারকাজ। আরও কেউ নিখোঁজ আছে কি না, নিশ্চিত করতে পারেনি নৌ-পুলিশ।
মরদেহগুলো পাশের দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পরিচয় শনাক্তের প্রক্রিয়া চলবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আব্দুল হান্নান।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেবল আদরিকেই পাওয়া গেছে, যিনি দুইটি মরদেহ শনাক্ত করতে পেরেছেন। এ ছাড়া আর কোনো মরদেহের পরিচয় জানা যায়নি, খোঁজ মেলেনি স্বজনদের।
বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকায় সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
মাদারীপুর নৌ-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক ও শিবচর থানার ওসি মিরাজ হোসেন জানান, লকডাউনের নির্দেশনা অমান্য করে স্পিডবোট চালক যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া থেকে আসছিলেন। তবে মাওয়া নৌ-ফাঁড়ির পরিদর্শক সিরাজুল কবিরের দাবি, ঘাট থেকে নয়, কাছের চর থেকে যাত্রী তুলে যাচ্ছিল এটি।
শিবচর থানার ওসি মিরাজ বলেন, স্পিডবোটটি যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া থেকে ছেড়ে কাঁঠালবাড়ী ঘাটের কাছাকাছি পৌঁছালে ঘাটে নোঙর করা বাল্কহেডের পেছনে ধাক্কা দেয়।
ধারণা করা হচ্ছে, চালক নিয়ন্ত্রণ হারানোয় স্পিডবোটটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নদীতে উল্টে যায়।
কাঁঠালবাড়ী নৌ-পুলিশের ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর থেকে আমরা ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করেছি। কতজন বোটে ছিল তা জানা যায়নি।
‘সাধারণত স্পিডবোটে ২০ জনের মতো যাত্রী ওঠে। এই স্পিডবোটে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। নদীতে আরও কেউ নিখোঁজ আছে কি না, জানতে উদ্ধারকাজ চলছে।’
হতাহত ব্যক্তিদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি নৌপথগুলোতে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। তারপরও যাত্রী নিয়ে নদীতে নামে ওই স্পিডবোট।
বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে মাওয়া নৌ-ফাঁড়ির পরিদর্শক সিরাজুল কবির দাবি করেন, স্পিডবোটটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যায়নি। লকডাউনের শুরু থেকে অসাধু একটি চক্র ঘাট এলাকাসংলগ্ন চর থেকে অবৈধভাবে যাত্রী তুলে চলাচল করছিল। সকালে ওই স্পিডবোটটি একটি চর থেকে ছেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে আরও তথ্য জানতে শিমুলিয়া ঘাটের একাধিক কর্মকর্তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।