বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অলৌকিক আগুনের নাটক: ১২ জনকে গ্রেপ্তার

  •    
  • ৩ মে, ২০২১ ০১:২৬

মকবুল হোসেন নামে একজন বলেন, কয়েক দিন পর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন ও আব্দুস সালামের বাড়ির খড়ে আগুন লাগে। এরপর থেকে প্রতিদিনই ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, মকসেদুল ইসলাম, মুরাদ হোসেন, মো. সাইফুল্লাহ ও নাঈম হোসেনের মধ্যে কারও না কারও খড়ের গাদা, ঘরের বারান্দা ও ঘরের ভেতরে থাকা খাট, তোশক, আলনা, আলনায় থাকা শাড়ি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর ও ঘরে রাখা গমের বস্তা, সারের বস্তা, খাবারের কনটেইনারসহ আসবাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ঘর পোড়ানোর মামলা থেকে বাঁচতে অলৌকিক আগুনের নাটক সাজিয়ে মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টির অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

পুলিশ নিউজবাংলাকে জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা গুজব ছড়িয়ে অলৌকিক আগুনের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।

ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আকরাম আলী জানান, শনিবার রাত দেড়টার দিকে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়।

গত ২৯ এপ্রিল বালিয়াডাঙ্গী থানায় সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সালেহা বেগমের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সামসুজ্জোহা, এহেতাসাম উল্লাহ, মকসেদুল ইসলাম, ইন্তাজ আলী, দেলোয়ার হোসেন, কফিল উদ্দীন, ওবায়দুল্লাহ, তহিদুর রহমান, আজিম উদ্দীন চৌধুরী, মন্টু আলম, মেহেরুন নেছা ও বিলকিস আক্তার। তাদের বয়স ৩১ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে।

মামলার বরাতে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আকরাম আলী বলেন, গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সালেহা বেগমের স্বামী মকবুল হোসেনের মৃত্যু হয়। এরপর গ্রামের কিছু মানুষ মকবুল হোসেনের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকার গুজব রটায় এবং বাদীর পরিবারের লোকজনকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে।

চলতি বছরের ২৮ মার্চ কে বা কারা সালেহা বেগমের চারটি গোয়ালঘর ও দুই বিঘা জমির গমে আগুন দেয়। ৬ এপ্রিল সালেহার চাচা সিরাজ উদ্দীনের খড় রাখার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এতে বাদীর পরিবারের পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, গত ৮ এপ্রিল দুপুরে প্রতিবেশী ইনতাজ আলীর বাড়ির কাপড় কাচার বালতিতে আগুন ধরে, এমন মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে বাদী ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন গ্রামের কয়েক ব্যক্তি।

তবে গ্রামবাসীর কাছে বিষয়টি নিয়ে বাদী কথা বললে তারা এই গুজবের সত্যতা দেখাতে পারেননি। এসব ঘটনার পরে ২৯ এপ্রিল সালেহা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বালিয়াডাঙ্গী থানায় একটি মামলা করেন।

স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম জানান, ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের পাঁচটি বাড়িতে প্রায় প্রতিদিন অলৌকিক আগুনের ঘটনা ঘটছে। প্রায় এক মাস আগে হঠাৎ করে দিনের বেলা গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিনের খড়ের ঘরে প্রথমে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হলে তারা এসে আগুন নেভায়। ওই সময় গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের বাড়িতে খড় সংরক্ষণের ঘরেও আগুন লাগে। আবারও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।

ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের একজন বাসিন্দা আগুনে পুড়ে যাওয়া কাপড় দেখাচ্ছেন। ছবি: নিউজবাংলা

মকবুল হোসেন নামে একজন বলেন, কয়েক দিন পর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল হোসেন ও আব্দুস সালামের বাড়ির খড়ে আগুন লাগে। এরপর থেকে প্রতিদিনই ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, মকসেদুল ইসলাম, মুরাদ হোসেন, মো. সাইফুল্লাহ ও নাঈম হোসেনের মধ্যে কারও না কারও খড়ের গাদা, ঘরের বারান্দা ও ঘরের ভেতরে থাকা খাট, তোশক, আলনা, আলনায় থাকা শাড়ি, লুঙ্গি, বিছানার চাদর ও ঘরে রাখা গমের বস্তা, সারের বস্তা, খাবারের কনটেইনারসহ আসবাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গ্রামের মানুষ।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অনেকে দাবি করেন অলৌকিকভাবে জীনেরা গ্রামের যেখানে সেখানে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের দাবি, পারিবারিক শত্রুতার কারণে আগুনের ঘটনা ঘটতে পারে। আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নামে ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশ।

আগুন আতঙ্কে ছোট সিঙ্গিয়া মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা ঘরের বাইরে জিনিসপত্র রাখছেন। ছবি: নিউজবাংলা

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আকরাম আলী নিউজবাংলাকে বলেন, আগুন লাগানোর ঘটনায় সন্দেহ হলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১২ জনকে আটক করা হয়। আগুন লাগানোর সঙ্গে আটক ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এ জন্য তাদের সালেহা বেগমের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে সালেহা বেগমের মামলা থেকে বাঁচতে গ্রামে অলৌকিক আগুনের সাজানো নাটক সাজানো হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করা এবং সালেহা বেগমের জমি দখল করা।

এদিকে রোববার বিকেলে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আকরাম আলী।

তিনি বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে। আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দিলে ও মামলাটির তদন্ত শেষ হলে আরও অনেক রহস্য বের হয়ে আসতে পারে।

কোর্ট ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আরিফুর রহমান গ্রেপ্তার ১২ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আসামিদের রিমান্ডের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের বিষয়ে ৬ মে শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

এ বিভাগের আরো খবর