ঢাকার সাভারে মহান মে দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ায় একটি কারখানার আটজন শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে।
মে দিবসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে কারখানা বন্ধ রাখতে হবে বিধায় এক দিন আগে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার আট ঘণ্টা জোরপূর্বক কাজ করিয়ে নেয়া হয়েছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন।
রোববার সকালে আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার ডিকে নিটওয়্যার লিমিটেড নামের কারখানায় এই শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটে।
আট শ্রমিককে পাঠানো ডিকে নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক আল আমিন হোসেন স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়, ‘আপনি প্রায়শই কোম্পানিবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন। ফলশ্রুতিতে শিল্প পুলিশ-১ বরাবর আপনার বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং আপনার সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলামূলক কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ ধারায় তিন দিন ফ্যাক্টরি বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তীতে প্রশাসন, শ্রমিক ফেডারেশন ও মালিকপক্ষের সমঝোতায় ও শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড না করার অঙ্গীকারনামার বিনিময়ে আপনাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।
‘তারপরও কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে আপনি কাজ বন্ধ করে শ্রমিকদের একত্রিত করে কোম্পানিবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হন। ইতিপূর্বেও বিভিন্ন সময় টিফিন বিল, ইফতার বিল, লাঞ্চ টাইমে আগে বের হওয়া নিয়ে সিকিউরিটির সাথে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে কারখানার ক্ষতিসাধন করেন। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করে আসছেন।
‘এমতাবস্থায় উপরোক্ত অসদাচরণের অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে কেন বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, অত্র পত্র প্রাপ্তির ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তার কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। অন্যথায় কর্তৃপক্ষ আপনার বিরুদ্ধে একতরফা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।’
শ্রমিকদের কাছে পাঠানো নোটিশ
১০ বছর ধরে ডিকে নিটওয়্যার লিমিটেডে ইনপুট ম্যান হিসেবে কাজ করেছেন রবিউল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ কালকা মে দিবস আছিলো। এই মে দিবসের অনুষ্ঠানে আমরা গেছিলাম। হয়তো এই জায়গায় স্যারেদের পক্ষ থাইকা কেউ আমাদের ফলো করছে কিংবা দেখছে। যদি যাই ওরা তো সহ্য করতে পারে না। এই কারণে আমাদেরকে এরকম নির্যাতন করতেছে। প্রত্যেক বছর মে দিবসেই তো আমরা যাই। গত শুক্রবার মে দিবসের আগের দিনও আমাদের আট ঘণ্টা ওনারা ডিউটি করাই নিছে।’
ছাঁটাইয়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী কারণে ছাঁটাই করছে জানার সুযোগ তারা দেয় নাই। সকালে গার্মেন্টসে গেলে নোটিশ ধরায় দিছে। বেতন সাত তারিখের মধ্যে দিতে হবে, ছয় মাসের বোনাস দিতে হবে, রিজাইন দিলে পাওনা ত্রিশ কর্মদিবসের মধ্যে দিতে হবে এমন দাবি ছিল আমাদের। আর রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় টিফিন বিল রমজান মাসে ১০ টাকা বেশি চাইছিলাম। কিন্তু এগুলা আমরা কিছুই পাই নাই।
‘শেষমেশ ইস্যু একটাই, ওই মে দিবসে আমরা গেছিলাম এটাই ওরা সহ্য করতে পারতেছে না। আর ছয় মাস আগের ঘটনায় এখন আমাদের অন্যায়ভাবে ছাঁটাই করা হইছে। কিন্তু ওই ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট।’
একই সময় ধরে চাকরি করা সিনিয়র কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সকালবেলা অফিসে যাওয়ার পরে আমারেসহ চার-পাঁচজনকে আলাদা এক জায়গায় নিয়া গেছে। যাওয়ার পরে আমার কাছ থাইকা মোবাইল কাইড়া নিছে। ১০ মিনিট পরে হাতে একটা নোটিশ ধরায় দিছে।
‘অ্যারপরে আমি জিজ্ঞাস করছি এটা কী কারণে? কয়, এটা তোমার জানতে হবে না। সামনে ঈদ আমাকে বেতন-বোনাস কোনো কিছু না দিয়া আমাদের কেন এইভাবে বাইর করে দিচ্ছেন জিজ্ঞাস করি। তখন ওনারা কোনো উত্তর দেয় না। তখন আশিক নামের একজন আমাদের হুমকি দেয়, তোরা যদি এগুলা চাইতে আসিস তোদের মারব।’
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আশুলিয়া আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, ওই শ্রমিকরা গতকালকে মে দিবসে আমাদের সঙ্গে ছিল। শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া করেছে। এই ক্ষোভ থেকেই নোটিশটা দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘নোটিশে যে ঘটনার উল্লেখ করছে সেটা অনেক পুরোনো ঘটনা। এই ঘটনা মালিকপক্ষ এবং প্রশাসনের মাধ্যমে বহু আগেই সমাধান হয়ে গেছে। এই পুরোনো ইস্যু নিয়া এখন নোটিশ দিয়েছে, এটা আসলে একেবারেই অযৌক্তিক। সামনে ঈদ আসছে। এই সময় কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা যাবে না। সরকার থেকেই এই রকম নির্দেশনা দেয়া আছে।’
এ বিষয়ে ডিকে নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগের ব্যবস্থাপক আল আমিন হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি শুধু এটুকু জানি যে ওই গার্মেন্টসে শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছে। তদন্ত করে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।’