বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পালিত বাবার ঘরে কিশোরীর পেটে সন্তান

  •    
  • ২ মে, ২০২১ ০০:৩৫

‘ওর বাফে আমারে ছাইড়া দেওনের পর আশ্রয়ন প্রকল্পে সরকারি ঘরে থাকতেছি। বাপ নাই হেইতে মাইয়াডার ভবিষ্যৎ চিন্তা হইরা বরগুনার আনোয়ার হোসেন আর মোর্সেদা বেগম লায়লার ধারে মাইয়াডারে পালতে দিছি। হ্যারা নিজেগো মাইয়া পরিচয় দিয়া মোর মাইয়াডারে পালনের কতা কইয়া ঢাকায় নেছেল। নিজের মাইয়া পরিচয় দিয়া পালনের কতা কইয়া মোর মাইয়াডার সর্বনাশ করেছে। আনোয়ারের ধর্ষণে মোর ১৪ বচ্ছইরের মাইয়াডা এহন ৯ মাসের পোয়াতি হইছে।’ 

অভাব-অনটন দূরে ঠেলে পরম যত্নে লালিত-পালিত হবে মেয়ে। পাবে নতুন বাবা-মা। স্কুল কলেজে যাবে; যাবে বিশ্ববিদ্যালয়েও। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দাঁড়াবে নিজের পায়ে।

ভেবেছিলেন, ঢাকা শহরে অট্টালিকার মধ্যে পরম সুখেই থাকবে নিজের কলিজার ধন। তাই অভাব অনটনের কারণে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে সাত বছরের মেয়েকে লালন-পালন জন্য দিয়েছিলেন বরগুনার এক হতদরিদ্র মা।

এখন মেয়েটির বয়স সবেমাত্র ১৪। এখনও শিশুসুলভ আচরণ ওর। গুছিয়ে সব কথা বলতে পারেন না এখনও। ২৭ এপ্রিল অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় সন্তান প্রসবের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি শিশুটি।

জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট অনুসারে, আগামী ৯ মে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

শিশুটির মা বলেন, ‘ওর বাফে আমারে ছাইড়া দেওনের পর আশ্রয়ন প্রকল্পে সরকারি ঘরে থাকতেছি। বাপ নাই হেইতে মাইয়াডার ভবিষ্যৎ চিন্তা হইরা বরগুনার আনোয়ার হোসেন আর মোর্সেদা বেগম লায়লার ধারে মাইয়াডারে পালতে দিছি। হ্যারা নিজেগো মাইয়া পরিচয় দিয়া মোর মাইয়াডারে পালনের কতা কইয়া ঢাকায় নেছেল।’

তিনি বলেন, ‘নিজের মাইয়া পরিচয় দিয়া পালনের কতা কইয়া মোর মাইয়াডার সর্বনাশ করেছে। আনোয়ারের ধর্ষণে মোর ১৪ বচ্ছইরের মাইয়াডা এহন ৯ মাসের পোয়াতি হইছে।

‘নিজের মাইয়ার বয়সী একটা মাইয়ারে যে ধর্ষণ হরতে পারে, মুই হ্যার ফাঁসি চাই, এইয়ার ক্ষতিপূরণও চাই।’

এ ঘটনায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আনোয়ার-লায়লা দম্পতিকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলা করেন শিশুটির নানি। ওইদিনই আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

আনোয়ার বরগুনা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। চাকরির সুবাদে স্ত্রী লায়লা এবং পালিত ওই শিশুকন্যাকে নিয়ে তিনি ঢাকায় বসবাস করতেন।

শিশুটির নানি বলেন, ‘অভাবের কারণ অর মায় (শিশুটির মা) সৌদি আরব গেছিল। নয় মাস আগে মোর মাইয়া দ্যাশে আইয়া মোরা নাতিরে ঢাকা দিয়া বরগুনার লইয়া আইছিল। তহনই মোর নাতির যে গর্ভ, মোরা বোজতে পারছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘ওর ভবিষ্যত কী অইবে? কুম্মে রাকপে? কেমনে পালবে এই বাচ্চা? কেডা ওরে খাওন-পরনের দায় নেবে? কিচ্ছু ভাইব্বা পাইতেছি না।’

নির্যাতিত শিশুটির ভাই জানান, বিষয়টি জানার পর তারা মামলা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এরপর পড়েন আরেক ঝামেলায়।

তিনি বলেন, ‘মোরা খুব গরিব। হেইয়ার লইগ্যাই ওরে (ছোট বোনরে) আনোয়ার ও লায়লার দারে পালতে দেতে রাজি অইছিলাম। মোর বুইনডা এহনও শিশু, ওরেই লালন-পালন করণ লাগে, এইয়ার মইদ্দে যদি ওরই বাচ্চা অয়, আপেনারাই কইন, এইডা কত কষ্টের!’

‘মোগো কোনো খেমতা নাই। আদালতে মামলা করছি, খরচাপাতি চালাইতে পারতেছি না। মামলাডা করছি ক্যান, হেইতে এহন উল্ডা হেরা মোগো ধাবায় ধমকায়’-নিজেদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন কিশোরীটির ভাই।

বরগুনা সদর হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের ইনচার্জ লাইজু আক্তার বলেন, ‘সন্তান প্রসবের জন্য শিশুটিকে গত ২৭ এপ্রিল বরগুনার সদর হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে ওর সন্তান প্রসবের তারিখ ৯ মে উল্লেখ করা হয়েছে। শিশুটি এখন পর্যন্ত সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছে। আমরা প্রথমে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের চেষ্টা করব। কিন্তু তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সিজার করা হবে।’

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা সদর থানায় কর্মরত উপপরিদর্শক (এসআই) নূরে জান্নাত কেয়া জানান, বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের অভিযোগে মামলায় আনোয়ার হোসেনকে ও ধর্ষণে সহযোগিতা করার জন্য তার স্ত্রী মোর্সেদা বেগম লায়লাকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই আমরা আনোয়ারকে গ্রেপ্তার করেছি।

তিনি আরও বলেন, ওই শিশুটি সন্তান প্রসব করলে সেই সন্তানের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। তারপর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। এরপর মামলার বিচার কাজ শুরু হবে।

এ বিভাগের আরো খবর