কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলায় অনিয়মের অভিযোগ এনে বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকাবাসী।
নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, সিমেন্ট কম দেয়ার অভিযোগ আছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। আর স্থানীয়দের দৃষ্টি এড়াতে সেখানে কাজ চলছিল গভীর রাতে।
ইটনা-বড়িবাড়ী সড়কে সড়কেরহাটিতে ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনটির নির্মাণকাজ চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাটি ভরাট, সীমানা দেয়াল নির্মাণ, মাটির নিচ থেকে বেজমেন্ট কলাম নির্মাণসহ প্রতিটি বিষয়ে দরপত্রের নির্দেশনা উপেক্ষা করছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা থামেনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দল বেঁধে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী।
তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে সবকিছু দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী করা হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছে।
৪০ শতাংশ জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে সাব-স্টেশনটি। প্রকল্পটির সিভিল ওয়ার্ক বা অবকাঠামোগত কাজের জন্য বরাদ্দ আছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি এই নির্মাণকাজ শুরু হয়।
এর আগে সানরাইজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছিল। তাদের কাজের অগ্রগতি সুবিধাজনক না হওয়ায় তাদের কাছ থেকে নিয়ে সেই কাজ দেয়া হয় এনার্জিপ্যাককে। আগামী ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু কাজের অগ্রগতি খুব একটা ভালো নয়।
স্থানীয় এক নির্মাণ শ্রমিক মো. কাঞ্চন বলেন, ‘আমি একদিন প্রতিবাদ করছিলাম। পরে আমারে ধমকায়া বিদায় করছে। সাইনবোর্ড দেহায়া কয়, এইহানো কিতা লেখা, দেখছস? মানে এইহান অনুমতি ছাড়া ডুহা নিষেদ। বাড়তি কতা কইলে ঝামেলা অইব। পরে আমি হেনতে আয়া পড়ি।’
এই প্রকল্পের একজন শ্রমিক জানান, সিমেন্ট, বালু, পাথরের মিশ্রণের অনুপাত হচ্ছে ১: ১.৫: ৩। অর্থাৎ সিমেন্টের দেড়গুণ বালু আর তিন গুণ পাথর। তবে তারা তিন বস্তা বালু এবং চার বস্তা পাথরের সঙ্গে এক বস্তা সিমেন্ট ব্যবহার করছেন।
যে মানের বালু ও পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো এখানে ব্যবহার হওয়ার কথা না বলেও স্বীকার করেন তিনি।
ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তাপস রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিডিউলে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে এই সামগ্রীই। বেজ ঢালাইয়ের কাজে আস্তর বালু না দিয়ে বিডি বালু ব্যবহার করা হয়েছে।
‘মোটা দানার আস্তর বালুর দাম বিডি বালুর চাইতে দ্বিগুণ বেশি। এ কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আস্তর বালু না দিয়ে বিডি বালু ব্যবহার করা হয়েছে। তা ছাড়া সিমেন্টের পরিমাণ দেয়া হয়েছে কম। এ কারণে আস্তর করা বালুর জমাটবাঁধা টুকরা হাতে নিয়ে চাপ দিলে সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়া হয়ে যায়।’
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা এনায়েত কবীর জানান, বিদ্যুতের টাওয়ার স্থাপনের জন্য মাটির নিচ থেকে রড দ্বারা আরসিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে বেজ কলাম বসানো হয়েছে। কিন্তু বেজ কলামগুলোতে রডের পরিমাণ কম দেয়া হয়েছে এবং পাথরের সঙ্গে ইটের খোসা ও সিলিকেট বালুর সঙ্গে বিডি বালু মিক্সড করে ঢালাই দেয়া হয়েছে। শিডিউল অনুযায়ী বেজ ঢালাই করার সময় স্টিলবোর্ড ব্যবহার করার কথা থাকলেও তারা সে কাজ চালিয়ে দিচ্ছে বাজারের পরিত্যক্ত কাঠ দিয়ে।
তিনি বলেন, ‘দিনের বেলায় নির্মাণকাজে অনিয়ম করলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। এ জন্য তারা রাতের আঁধারে ঢালাইয়ের কাজ করতে চেয়েছিল। পরে ঢালাই মেশিনের শব্দ শুনে স্থানীয়রা এখানে এসে দেখে কোন ইঞ্জিনিয়ার বা কোম্পানির কোনো লোক সেখানে উপস্থিত নেই। শ্রমিকরা তাদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন।’
তবে এনার্জিপ্যাক ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের সাব-অ্যাসিসট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নিম্নমানের কোনো সামগ্রী আমরা ব্যবহার করিনি। আমরা আমাদের কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী গুণগত মান ঠিক রেখেই কাজ করছি।’
কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের নির্বাহী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো প্রকার অনিয়ম করার সুযোগ নাই। কারণ সেখানে কাজ তদারকি করার জন্য আমাদের প্রতিনিধি রয়েছে।’
রাত ১১ টার পরে ঢালাই করার কোনো নিয়ম আছে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব কাজ দিনে করার নির্দেশ রয়েছে। তবে কেন তারা রাতে কাজ করেছিল সেই বিষয়ে খোঁজ নেব। আর কোনো প্রকার নিম্নমানের সামগ্রী যেন ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব।’
স্থানীয়রা কেন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্থানীয়দের সঙ্গে কর্মচারীদের খানিকটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এখন সেটার মীমাংসা হয়েছে।’
এই কর্মকর্তা জানান, এই সাব-স্টেশনের প্রকল্পে একটি অফিস কক্ষ কন্ট্রোলরুম ভবন, সাব-স্টেশন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা লোডশেডিং, লো-ভোল্টেজ এবং সিস্টেম লস এবং ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে।